Wednesday, March 3, 2010

বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী শিল্পধারা ঃ ক্যালিগ্রাফি


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প একটি ব্যতিক্রমী ধারা হিসেবে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এক যুগ আগেও বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি একটি শিল্প ধারা হিসেবে গড়ে উঠবে এ ধারণা আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল। বর্তমান সময়ে ক্যালিগ্রাফিকে বাংলাদেশে পরিচিত, পুনর্জাগরণ ও প্রতিষ্ঠিত করতে যে কয়জন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী অক্লান্ত প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আবদুর রহীম অন্যতম। এছাড়া ক্যালিগ্রাফির আন্দোলন, সংগঠন ও শিল্পীদের ক্যালিগ্রাফির অঙ্গনে জড়ো করতে শিল্পী ইব্রাহীম মন্ডল বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ শিল্পাঙ্গনে আরো যারা ভূমিকা রেখে চলেছেন শিল্পী আরিফুর রহমান, শহীদুল¬লাহ এফ. বারী, সবিহ-উল আলম, মোঃ আমিনুল ইসলাম আমিন, মোবাশ্বের মজুমদার প্রমুখ উলে¬লখযোগ্য। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি দ’টি ধারায় প্রবাহিত-(১) ট্রেডিশনাল বা দ্রুপদি ধারা (২) পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফি। দ্রুপদি ধারায় হাতে গোনা কয়েকজন ক্যালিগ্রাফার রয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে বহুসংখ্যক দলগত ও একক ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জাঁক-জমকপূর্ণ ও বড় প্রদর্শনী হচ্ছে সীরাতুন নবী (সঃ) উপলক্ষে রবিউল আউয়াল মাসে ঢাকা সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র আয়োজিত ও বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি সোসাইটির সহযোগিতায় যৌথ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী। এ পর্যন্ত ৯টি প্রদর্শনী তারা আয়োজন করেছে। এ প্রদর্শনীটিই বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফির বাস্তব চিত্র ও অবস্থান প্রকাশ করে থাকে। এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত শিল্পকর্ম দেখে বোঝা যায় ট্রেডিশনাল ধারা ও পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন বেশ জোরেশোরে বাংলাদেশে হচ্ছে। ট্রেডিশনাল ধারায় বাংলাদেশে যারা উলে¬লখযোগ্য, তারা হলেন শিল্পী শহীদুল¬লাহ এফ. বারী মোহাম্মদ আবদুর রহীম, বশির মেজবাহ ও তরুন শিল্পী আবু দারদা নূরুল¬লাহ প্রমুখ। শিল্পী আরিফুর রহমান ট্রেডিশনাল ধারায় কাজ করার চেষ্টা করলেও তার কোন শিল্পকর্মে ক্যালিগ্রাফির কলমের প্রয়োগ দেখা যায় না। তবে তিনি ট্রেডিশনাল ধারার প্রতি যতœশীল ও আগ্রহী বলে ধারণা হয়। পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে শিল্পী মুর্তাজা বশীরের নাম বিশেষভাবে উলে¬লখ করতে হয়। তিনি কালিমা তৈয়্যেবা নামে একটি একক প্রদর্শনী করেছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গ্যালারিতে। তার এ পেইন্টিং প্রদর্শনী মূলত বাংলাদেশের শিল্পকলায় পেইন্টিংয়ে কিভাবে ক্যালিগ্রাফির উপস্থাপন করতে হয় তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিল্পী আবু তাহের প্রধান ও খ্যাতিমান শিল্পী, তিনি বিমূর্ত ধারার ক্যালিগ্রাফি নির্মাণ করে থাকেন। শিল্পী সবিহ্-উল আলম- একাধারে লেখক, ডিজাইনার ও শিল্পী। তার ক্যালিগ্রাফি স্কেচ চিত্রকলায় ত্রিমাত্রিক ধারাকে পরিপুষ্ট করেছে। শিল্পী শহীদুল¬লাহ এফ. বারী সউদী আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে ডিগ্রী প্রাপ্ত। এ দেশে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফিতে আন্তর্জাতিক ধারাসমূহ উপস্থাপনে সক্ষম। শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম দীর্ঘদিন ক্যালিগ্রাফি শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত। ক্যালিগ্রাফি চর্চার সাথে সাথে এর ইতিহাস, শৈলী, নন্দনতত্ত্ব, উদ্ভব ও গোড়ার কথা, উপকরণ, কলাকৌশল ও বৈশিষ্ট্য প্রভৃতিকে লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরছেন তিনি। তার ইসলামী ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া মসজিদ, ধর্মীয় ইমারত ক্যালিগ্রাফি দিয়ে অলংকরণ করেছেন। সিরামিক, কাঠখোদাই, ফুলদানি, কলমদানি, কাঁচ, পটারি, মার্বেল পাথরে এবং তেল রং, পানি রং মাধ্যমে প্রতিটি শিল্পাঙ্গনে তার পদচারণা রয়েছে নিপুণ হাতে। মসজিদ অলংকরণ তার একটি উলে¬লখযোগ্য কাজ। সম্প্রতি (২০০২ খ্রীঃ) চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র বন্দরের ৫নং জেটি গেটের কাছে প্রাচিন একটি মসজিদের পুনঃসংস্কারের পর তিনি ক্যালিগ্রাফি দিয়ে অলংকরণ করেন। মসজিদে ঢুকে সেগুন কাঠের দরজায় চমৎকার ক্যালিগ্রাফি নজরে পড়বে। বৃত্তাকারে দরজার উভয় পাশে চারবার এ ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। বৃত্তের পরিধি বরাবর দশবার ‘মুহাম্মদ’ ও মাঝে দু’বার ‘আল¬লাহু’ শব্দটি কুফী লিপির নান্দনিক ধারায় খোদাই করে লেখা হয়েছে। এরপর সামনে তাকালে অভিভূত হতে হয় মিহরাবসহ পশ্চিমের দেয়াল দেখে। মিহরাবে তিনি সাদা মার্বেল পাথরে অত্যন্ত চমৎকার করে জ্যামিতিক ফুল-লতা-পাতার নকশা সহকারে কুফি ও সুলুস লিপিতে মেটালিক সবুজ রং দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করেছেন। তার এ ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা না দেখে শুধু বর্ণনায় অনুভব করা সম্ভব নয় এবং তা বর্ণনা করাও বেশ দুরূহ ব্যাপার। মিহরাবের উপরে চতুর্ভুজাকৃতি এ ক্যালিগ্রাফিতে মাঝে ‘আল¬লাজাল¬লা জালালাহু’ সুলুস লিপিতে এবং চার পাশের বাহুতে ও কোণায় যথাক্রমে ‘আল-মুলকু লিললাহ’ ও ‘আললাহ’ চারবার কুফি লিপিতে অলংকরণ সহকারে করা হয়েছে। মিহরাবের দু’পাশে উপরে সবুজ টাইলস কেটে কাবা ও মদীনা মসজিদের গম্বুজের আদলে তুঘরা লিপিতে যথাক্রমে কুরআনের বাণী ‘ওযামুর আহলাকা বিচ্ছালাতি, এবং হাদীসের বাণী ‘আল ইইহসানু আন তা’বুদাললাহ’...দিয়ে চমৎকার ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। চারপাশের দেয়লে মার্বেল পাথরে মেটালিক সোনালী রংয়ের হরফে সুলুসলিপি স্বতন্ত্র ধারায় ব্যান্ডের মত সূরা আর রহমান লেখা ক্যালিগ্রাফিটি যেন কাবা শরীফের গিলফের ওপর ব্যান্ড করে লেখার কথা স্মরণ করিয়েদেয়। মিহরাবের ডান পাশে সূরার শেষে কালো পাথরে মসজিদের পুনঃসংস্কার দাতা, ক্যালিগ্রাফির সন, তারিখ প্রভৃতি ছোট করে লেখ হয়েছে। দক্ষিন পাশের দেয়ালে আর্চের মত করে সাদা মার্বেল পাথরে কালো কালিতে সূরা সফের আয়াত ‘ইয়া আইয়ু হাললাজিনা আমানু ইয়ানুদিয়া লিসসালাতি....এবং ‘আললাহু আকবার’ ও ‘ইন্নাস সালাতা তানহা ইনিল ফাহশা-ই ওয়াল মুনকার’ আয়াত অর্থসহ সুলুস লিপিতে লেখা হয়েছে। গম্বুজের নিচের দিকে আটটি কাঠের প্যানেলের চারটি আরবি নাশখ লিপির (অলংকরণসহ) চারটি বাংলয় নিশ্চয় আললাহর স্মরণ অন্তরসমূহকে প্রশান্তি দেয়’ বাক্যটি ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে খোদাই করে। আরবি আয়াত হচ্ছে ‘আলা বিযিকরিললাহি তাতমাইনুল কুলুব’। এছাড়াও ২০০০ সালে ঢাকার বারিধারা, ডিওএইচএস জামে মসজিদে কাঠে ক্যালিগ্রাফি করেছেন, মসজিদের ভেতর চারটি পিলরের সিলিংয়ের কাছে মোট ৪৪টি আললাহর গুণবাচক নাম বেঙ্গল তুগরার আধুনিক ধারায় খোদাই করে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। দরজার ওপরে মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া নাশখ লিপিতে খোদাই করে লেখা হয়েছে। মসজিদের ক্যালিগ্রাফির এ শিল্পকর্ম একটি ব্যতিক্রম ধর্মী প্রয়াস। মৃৎপাত্র অলংকরণ তার আর একটি সংযোজন, মধ্যযুগে সালতানাত মোগল আমলের পরে আধুনিক যুগে এদেশে এটাই প্রথম প্রচেষ্টা সিরামিক পটারিতে ক্যালিগ্রাফি অংকন। ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই মুসলমান শিল্পীরা পানির পাত্রকে অলংকরণ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, ফুল, লতা-পাতা জ্যামিতিক নকশা দ্বারা। শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম- সেই ধারাকে তুলে এনে এদেশীয় অলংকরণ ফূল লতা-পাতার মোটিফ ব্যবহার করে গে¬লজ ফায়ারিং এর মাধ্যমে সিরামিক পটারিতে ক্যালিগ্রাফি করেছেন। তার রংয়ের ব্যবহার এখানে আকর্ষণীয় ও রুচিসম্মত। বিশেষ করে কোমল রংয়ের ব্যবহার তার পটারিকে বিশেষিত করেছে। গত ৫ম স্থানে ক্যালিগ্রাফি করেছেন। মসজিদের প্রবেশদ্বারের উপরে মাগরেবি কুফী লিপিতে কুরআনের আয়াত “ইন্নামা ইয়ামুরু মাসাজিদাললাহে মান আমানা বিললাহী ..... মুহতাদিন পর্যন্ত লেখা হয়েছে। জমিনে কয়েকটি হারকা রংয়ের ফুলের নকশা দেওয়া হয়েছে ক্যালিগ্রাফি মোরালটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ হচ্ছে ১৫ফুট ও আড়াই ফুট। মসজিদের ভিতরে মিহরাবের উপরে জ্যামিতিক কুফী লিপিতে কালেমা তৈয়্যবা লেখা হয়েছে। মিহরাবের ভিতরে ‘আললাহু আকবর’ সুলুস লিপিতে বর্গাকৃতি করে এবং দুই পাশে গম্বুজ আকৃতি করে কুরআনের দুইটি আয়াত লেখা হয়েছে। প্রমত্তাপদ্মার তীর ঘেঁষে নয়নাভিরাম সবুজের বুক চিরে সুন্দর এই মসজিদটিতে ইসলামী সংস্কৃতির ও শিল্পকলার প্রধান উপাদান আরবী ক্যালিগ্রাফির সংযোজনে একে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। শিল্পী আবদুর রহীমের আরেকটি উলেলখযোগ্য কাজ হচ্ছে ঢাকা সেনানিবাসে সদর দফতরের সামনে নবনির্মিত আর্মি সেন্ট্রাল মসজিদে ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং। বিশালাকার একটি মাত্র গম্বুজের এই মসজিদের অভন্তরভাগে ১২টি আর্চে ১২টি ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং করেছেন। সুলুস, নাশখি ও দেওয়ানী শৈলির এই ক্যালিগ্রাফিগুলোর জমিনে বাংলার নিসর্গ বিমূর্তভাবে ফুটে উঠেছে। এক্রেলিক রং দিয়ে কাপড়ের ক্যানভাসে এ ধরনের ক্যালিগ্রাফি বাংলদেশের মসজিদে প্রথম প্রয়োগ বলে অনুমিত হয়। মিহরাবের উপরে সুলুস লিপিতে গাঢ় মেজেন্ডা হলুদের মিশ্রণের পটভূমিতে হলুদ রংয়ের কালেমা তৈয়্যেবা চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে। মসজিদে যে কোন ধরনের ক্যালিগ্রাফি সংযোজনে শিল্পী আবদুর রহীম সিদ্ধহস্ত। পাথর, কাঠ, কাঁচ, সিরামিক টাইলস, মেটাল কিংবা ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং দিয়ে মসজিদে প্রচুর ক্যালিগ্রাফির উপস্থাপন তাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম সম্পর্কে একটু বেশি আলোচনা করার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন, প্রচার প্রসারে তিনি বহুমুখী ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাছাড়া আরবি ক্যালিগ্রাফির লিপি শৈলীর গভীরে যেতে হলে লিপিগুলো সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রতিভাবান ও প্রতিশ্র“তিশীল ক্যালিগ্রাফার মোহাম্মদ আবদুর রহীম সেগুনেও গুনান্বিত। এরই ফলশ্র“তিতে একেবারে শুরুথেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আরবি লিপি শিল্পের দর্শণ, বৈশিষ্ট্য নান্দনিকতা ব্যাকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে তার মনে সুস্পষ্ট ধারণা গড়ে উঠেছে, যা তাকে ইসলামি ক্যালিগ্রাফি বইটি রচনায় সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি অগ্রযাত্রায় মৌলিক ভূমিকার অংশ হিসেবে একে ধরা যায়। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক প্রকাশিত প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ফিচার ইত্যাদি সবগুলো রচনার ৭০ শতাংশেরও বেশি রচনা শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীমের হাত থেকে বেরিয়েছে। এছাড়া তিনি ক্যালিগ্রাফি সোসাইটির প্রশিক্ষণ কোর্সের শৈলী বিষয়ক অন্যতম ওস্তাদ। ক্যালিগ্রাফি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী হিসেবে তিনি ঢাকা সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র আয়োজিত ১৯৯৮ সালে প্রথম যৌথ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। দেশে বিদেশে তার ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শিত হয়েছে। বাংলাদেশে মৌলিক ক্যালিগ্রাফি চর্চায় তার অবদান অনস্বীকার্য। মোহাম্মদ আবদুর রহীম শুধু ক্যালিগ্রাফি ¬িশল্পীই নয় এ বিষয়ে তিনি একজন উঁচুমানের গবেষকও বটে। পবিত্র মাহে রামাজান ১৪২৬ হিঃ (২০০৫ ইং) উপলক্ষে বাংলাদেশে আয়োজিত ইরানী কালচারাল সেন্টারের শৈল্পিক দৃষ্টিতে কুরআন প্রদর্শনী উপলক্ষে “বিসমিল¬লাহির রাহমানির রাহীম” শীর্ষক ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও উলেলখযোগ্য হারে এগিয়ে এসেছেন। শিল্পী ফেরদাউস আরা আহমেদ, শিল্পী ফেরদউসী বেগম, শিল্পী রেশমা আকতার, শিল্পী নাজমুন সাইদা পোলি, শিল্পী মাসুমা আখতার মিলি, শিল্পী মোসাম্মাৎ মোকাররমা, শিল্পী শর্শিল কাদের প্রমুখ ক্যালিগ্রাফি শিল্পী বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি চর্চায় ব্যতিক্রমী ভূমিকা রেখে চলেছেন। শিল্পী ফেরদাউস আরা আহমেদ মহিলা ক্যলিগ্রাফির শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মেহেদি পাতার রস দিয়ে ক্যালিগ্রাফির শিল্পকর্ম করেন। তিনি এটা দিয়ে পবিত্র কুরআনের একটি কপিও লিখেছেন। আরানের কুরআন প্রদর্শনীতে এবার ২০০৬ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে তার মেহেদি পাতার রসে লেখা কুরআন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শিল্পী ফেরদাউসী বেগম তার শিল্পকর্মে সূচিকর্মের ব্যবহারে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত করেছেন। অন্যান্য মহিলা ক্যালিগ্রাফি শিল্পীও চমৎকার ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং করেন। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, মহিলাদের ভেতরে এখনও কোন ট্রেডিশনাল ধারার শিল্পী গড়ে ওঠেনি। তবে আশার কথা হচ্ছে ক্যালিগ্রাফি সোসাইটির প্রশিক্ষণ কোর্সে বেশ কয়েকজন মহিলা ট্রেডিশনাল ধারার শিক্ষা গ্রহণ করছেন। আশা করা যায় আগামী ১০ বছরের মধ্যে ক্যালিগ্রাফি শিল্পে ট্রেডিশনাল ও পেইন্টিং ধারায় মানসম্মত শিল্পীর শিল্পকর্ম দেখতে পাব। ক্যালিগ্রাফি শিল্প সবসময়ই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এসেছে। তাই মুসলিম প্রধান এই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেও ক্যালিগ্রাফি শিল্পের উন্নয়ন, প্রচার, প্রসার ও সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এই দাবি ও আশা করছি। এই শিল্পের সাথে সংশি¬লষ্ট লেখক, গবেষক, শিল্পী, সংগঠক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির সক্রিয় ভূমিকাকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানাই। বিশেষ করে মহিলা শিল্পীরা এতে আরো ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসবেন এই আশা করি। -ফাতেমাতুজ জোহরা

No comments:

Post a Comment