Wednesday, March 3, 2010

দুবাই ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফির ৪র্থ জমজমাট প্রদর্শনী


আরবী ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে আরব শিল্পকলার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা আরব সভ্যতার প্রাথমিক যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দীর্ঘ ১৪শ বছরের আলোকোজ্জ্বল পথ পাড়ি দিয়ে আরব সভ্যতার আধুনিক পর্যায়ে এসে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এটা The core of genuine arts অর্থাৎ প্রকৃত শিল্পকলার শাস এবং অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের উৎস য অনুপ্রেরণা স্বরূপ। বিশেষ করে যুখরুফাহ আল আরাবিয়া বা আরবী নকশাকলা, আরব স্থাপত্য ও পবিত্র কুরআনের অলৌকিক এবং অমীয় বাণী পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আরবী ২৮টি হরফ ইসলামী হরফ হিসেবে পরিগণিত হয়। আরবী ক্যালিগ্রাফির প্রতি শুধু প্রশংসা বাণী নয় বরং আরবী হরফের অত্যাশ্চর্য আকৃতি বিশেষ করে যেটা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রয়োগ ও পরিশোধন করা হয়েছে। আরবী হরফের ক্যালিগ্রাফিতে রয়েছে চমৎকার ঐকতান ও সৃজনশীল শৈল্পিক অবকাঠমোগত প্রকাশের ক্ষমতা, পবিত্র কুরআনের কাতিব বা লিপিকার থেকে যা অনুপ্রাণিত হয়ে সহজেই একজন আরবী ক্যালিগ্রাফারের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। আরবী হরফের স্বাভাবিক নমনীয়তা, সৌন্দর্য প্রকাশের সহজাত বৈশিষ্ট্যকে একজন ক্যলিগ্রাফার সফলভাবে প্রয়োগ করে বহুমুখী সৃজনশীল শিল্পকর্ম সেটা ট্রেডিশনাল কিংবা পেইন্টিং অথবা অন্য কোন মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। তবে ট্রেডিশনাল বা শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির যে অন্তর্নিহিত শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেটা অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই শুধু খাগের কলমের টানে যে ক্যালিগ্রাফি আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয় সেটাতে অলৌকিক, আধ্যাত্মিক ও স্রষ্টার সাথে রসসিক্ত এক মৌন আলাপনই হৃদয়ে জেগে ওঠে। অনুভবে এক অনাবিল প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফি। দুবাই ডিপার্টমেন্ট অব টুরিজম এন্ড কমার্স মার্কেটিং (ডিটিসিএম) ৪র্থ বারের মত দুবাই আন্তর্জাতিক আরবী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। গত ২২ থেকে ২৮ ফেব্র“য়ারি ২০০৭ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জমজমাট এ প্রদর্শনেিত ৯টি দেশে ২১ জন সমকালীন অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ক্যালিগ্রাফারের বাছাইকৃত অসাধারণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম স্থান পায়। প্রায় সবগুরলা শিল্পকর্মই প্রদর্শনীর প্রথম দু’তিন দিনে বিক্রি হয়ে যায়। সমাপনী অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড আরব আমিরাতের সংস্কৃতি, যুব ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রী আবদুল রহমান আল ওয়াইস বর্তমান সময়ের খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্যালিগ্রাফার ও ওস্তাদ তুরস্কের হাসান চালাবীকে বিশেষ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। মিজান বা স্বরচিহ্ন বিশিষ্ট এই বিশেষ ট্রফিটি গ্রহণকালে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিটিসিএম-এর মহাপরিচালক খালিদ এ বিন সুলাইম। ওআইসির গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক বিশেষ সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। দুবাই এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ হামদান বিন মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের অর্থায়নে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ক্যালিগ্রাফারগণ হলেন--আহমদ আমীন শামতাহ (সিরিয়া), জাওয়াদ খোরান (ইরান), হাকেম গান্নাম (ইরাক), হুসাইন আলী আসিরী আল হামিশী (সৌদি আরব), প্রফেসর ড. খশরু সুরাশি (তুরস্ক), দাউদ বাকতাশ (তুরস্ক), ড. রোদান ভায়াহ (ইরাক), আব্বাস আখাউইন (ইরান), ওসমান ওজচাই (তুরস্ক), মোহাম্মদ জাকারিয়া (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), মোহাম্মদ মানদি (মিশর), নাজিয়া সুবাশি (তুরস্ক), ওসসাম শওকত (ইরাক), ইয়াকুব ইবরাহীম সুলাইমান (জর্ডান) ও আরব আমিরাতের ৪ জন মহিলা ক্যালিগ্রাফার যথাক্রমে ফাতিমা সাঈদ (দুবাই), ফাতিমা মোহাম্মদ আব্দুর রহীম (ইউএই), মাজিদাহ সালিম মুহাম্মদ (শারজাহ) ও নারজিস নূরুদ্দিন (আবুধাবী)। ট্রেডিশনাল আরবী ক্যালিগ্রাফির সুলুস, নাশখ, দিওয়ানী, কুফি, নাস্তালিক প্রভৃতি ধারায় সম্পূর্ণ ঐতিহ্যবাহী কালি দিয়ে এবং ক্যালিগ্রাফির খাগের কলম দিয়ে শিল্পকর্ম করা হয়েছে। প্রদর্শনী উপলক্ষে ৮০ পৃষ্ঠার একটি অসাধারণ ক্যাটালগ প্রকাশ করা হয়। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের পোটেট ছবি, ক্যালিগ্রা”িফর একটি করে শিল্পকর্মের ছবিসহ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিখ্যাত সমকালীন ক্যালিগ্রাফারদের মন্তব্যসহ আরবী ক্যালিগ্রাফির ইতিহাস, ক্রমধারা, উন্নয়ন প্রকৃতি নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র ও ক্যালিগ্রাফিসহ একটি মহামূল্যবান প্রবন্ধ রয়েছে। বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি গবেষক ওস্তাদ মুহাম্মদ আবদুরবাহ উলান প্রবন্ধটি লিখেছেন। বাংলাদেশেও ট্রেডিশনাল আরবি ক্যালিগ্রাফির চর্চা শুরু হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে “ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ” নামের সংগঠনটি শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি শেখাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলদেশ থেকে এবারই প্রথম তুরস্কে ওআইসি’র গ্রবষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত ৭ম হাশিম মোহাম্মদ আল বাগদাদী শৈলীভিত্তিক আরবী ক্যালিগ্রাফির সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা হয়। ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আহ্বান জানানোর পর ১২ জন নবীন-প্রবীণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পী এতে রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫ জন প্রতিযোগিতায় শিল্পকর্ম পাঠায়। খাগের বা বাঁশের কঞ্চির কলম দিয়ে, নির্দিষ্ট মাপের নীব ও কাগজে নির্দিষ্ট আয়াত ও টেক্সট, নির্দিষ্ট শৈলীতে শিল্পকর্ম করতে হয়। বিশুদ্ধ শৈলী ও নিপুণ দক্ষতার প্রতিযোগিতা এটি। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, সেক্রেটারী ও প্রশিক্ষক ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ, আবুদারদা মোহাম্মদ নূরুললাহ সদস্য ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি, মাসুম বিললাহ, মোরশেদুল আলম ও সিদ্দিকা আফরিন লামিয়া, সদস্য ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ।আরবী ক্যালিগ্রাফির ট্রেডিশনাল বা শৈলীভিত্তিক শিল্পকর্মে ঐতিহ্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা ও সর্বোপরি এতে নির্ভজাল শিল্প-সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিকভাবে আজ আরবী ক্যালিগ্রাফি নবতর উদ্দিপনা ও প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। দুবাই প্রদর্শনীর মত বাংলাদেশেও ক্যালিগ্রাফির আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবাই এগিয়ে আসবেন এই আহ্বান জানাই। -মোহাম্মদ আবদুর রহীম

No comments:

Post a Comment