Monday, March 8, 2010

ইসলামী ক্যালিগ্রাফিতে “মুহাম্মদ (স.)” শব্দের নান্দনিক উপস্থাপন


ইসলামী ক্যালিগ্রাফির ইতিহাস ও ক্রমধারায় পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বাণী দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে সব চেয়ে বেশী। আললাহ, মুহাম্মদ ও বিসমিললাহ শব্দ দিয়েও অসংখ্য ক্যালিগ্রাফি করেছেন ক্যালিগ্রাফি শিল্পীগণ। হয়ত এমন একজনও ক্যালিগ্রাফার পাওয়া যাবে না যিনি এসব শব্দ দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করেননি। বিশেষ করে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.) নামটি দিয়ে অসংখ্য ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। ইসলামে যেহেতু ছবি অঙ্কন নিষিদ্ধ, তাই পবিত্র কুরআন হাদীসের বাণী ও আললাহ, রাসূল, মুহাম্মদ বিসমিললাহ শব্দ দিয়ে শিল্পীগণ আধ্যাত্মিক শিল্পকর্ম নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছেন। এতে পুণ্যলাভের আকাক্সক্ষা করেছেন। ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকেই বিভিন্ন শৈলী নাশখী, সুলস, কুফী, দিওয়ানী, রিকা, রায়হানী, তালিক, মুহাক্কাক প্রভৃতি আরবী শৈলীর সাথে নাস্তালিক, শিকাস্তে ফারসী শৈলী এবং সিন্দী, মুলতানী উর্দূ শৈলীতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ভাষা ইংরেজী, চিনা, জাপানী এমনকি বাংলা লিপিতেও ক্যালিগ্রাফির প্রয়াস চালানো হয়েছে। রাসূল (স.) বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার, গোত্র প্রধানের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন পত্রের মাধ্যমে। কুফী লিপিতে লেখা এসব পত্রের শেষে একটি সিলমোহরেরছাপ দেয়া হয়েছে, যাতে পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচে আল্লাহ, বাসূল মোহাম্মদ শব্দ রয়েছে। উল্লেখ্য, কুফী লিপিতে লেখা হয়েছে এসব শব্দ। বলা যায়, ইসলামী ক্যালিগ্রাফিতে মুহাম্মদ শব্দের ব্যবহার সেটাই প্রাচীনতম। এরপর কুফা, হিরা, আম্বও, মক্কা মদীনার ক্যালিগ্রাফারগণ কুফী লিপিতে মুহম্মদ শব্দ দিয়ে অসংখ্য ক্যালিগ্রাফি করেছেন। গোলায়িত ছয়টি ধারা সুলুস, নাশখী, রাইহান, মুহাক্কাক, তাওকী ও রিকার সাথে কুফী লিপি ও বিভিন্ন ভাষার লিপিতে মুহাম্মদ (স.) নামের ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। ফাতেমী যুগে কায়রোর আল আকশার মসজিদে কুরআনের একটি আয়াতের বৃত্তাকার লেখার মধ্যস্থলে মুহাম্মদ ও আলী কুফী দায়েরাহ লিপিতে লেখা হয়েছে। এছাড়া কুফী মুয়াররাক মাদফুর লিপিতে মুহাম্মদ (স.) ৮ বার লিখা হয়েছে। চমৎকার দৃষ্টিনন্দন এই আটকোণা তারকা সদৃশ ক্যালিগ্রাফিটি করেছেন বিখ্যাত ইরানী ক্যালিগ্রাফার শায়খ ইব্রাহীম ফাদেল মাশহাদানী। ১৩৮৭ হিজরীতে কুফী মাদফুর লিপিতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ক্যালিগ্রাফিটি করেছেন আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুল কাদের। ৫ কোণা তারকার মত করে ৫ বার মুহাম্মদ (স.) শব্দটি লেখা হয়েছে। ১৩৯৪ হিজরীতে ক্যালিগ্রাফার হাসান হাবাস এটি কুফী মুরাববাআ লিপিতে লিখেছেন। চমৎকার একটি চৌকোণা ক্যালিগ্রাফিতে মুহাম্মদ শব্দটি চারবার লেখা হয়েছে। পটভূমিতে লিপি চাতুর্য্যওে প্রয়োগের ফলে সাদা জমীনে অনুরূপ চারবার আলী লেখা ফুটে উঠেছে। এই বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফিটি করেছেন প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফার কামিল সালমান জাবুরী। সম্ভবত ১৪২০ হিজরীতে এটা লেখা হয়েছে। এ শতাব্দীর বিখ্যাত তুর্কী ক্যালিগ্রাফার আমিন বারিন পত্রপল্লবিত কুফী লিপিতে গোলাকার আকৃতিতে মুহাম্মদ শব্দটি ৫ বার লিখেছেন। কিন্তু একটি মিম থেকে শব্দ ৫টি ফুলের পাপড়ীর মত ছড়িয়ে পড়েছে। এ রকম সুলুস লিপিতে অসংখ্য ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে মুহাম্মদ শব্দটি নিয়ে। অপরাপর আরবী শৈলী রাইহান, মুহাক্কাক, তাওকি, রিকা, নাশখী এবং ফারসী লিপি নাস্তালিক, শিকাস্তে লিপিতে আমরা মুহাম্মদ শব্দ দিয়ে অসংখ্য ক্যালিগ্রাফি দেখতে পাই। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরাও শুধু আরবী নয় বাংলা লিপিতেও মুহাম্মদ শব্দটি দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি করেছেন। রাসূলের (স.) প্রতি ভালবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধা ও প্রেমের নজরানার প্রকাশ করতে গিয়ে এসব ক্যালিগ্রাফি তারা করেছেন বলে ধারণা করা হয়। -মোহাম্মদ আবদুর রহীম

No comments:

Post a Comment