Wednesday, March 3, 2010

আরবী ক্যালিগ্রাফির প্রকার ও প্রকরণ


ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে আমরা মোটামুটি একটি ধারণা পেয়েছি। সুন্দর ও শিল্পসম্মত হস্তলিপিকে আমরা ক্যালিগ্রাফি বলি। আরবী ক্যালিগ্রাফি এখন বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রদর্শনী, ক্যালেন্ডার, বইয়ের প্রচ্ছদ প্রভৃতিতে আরবী ক্যালিগ্রাফির বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফিকে আমর দু’ভাগে বিভক্ত করতে পারি। ১. ট্রেডিশনাল বা দ্রুপদি ধারা ২. পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফি। ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলীগত নীতিমালা অনুসরণ করে নিখুঁত হরফের নতুন নতুন কম্পোজিশনের ক্যালিগ্রাফি রচনা করা। শৈলীগত আলোচনায় নির্দিষ্ট ফন্টের কথা এসে যায়। দ্রুপদি ধারায় স্থান বা ভৌগোলিক দিক দিয়ে কিছু ফন্টের নামকরণ হয়েছে যেমন- কুফি। ইরাকের একটি নগরী কুফার নামানুসারে এই নামকরণ হয়েছে। এছাড়া মক্কী, মাদানী, বিহারী প্রভৃতি লিপির নাম আমরা পেয়ে থাকি। শৈলীর আক্ষরিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় যে লিপিগুলো এসেছে তা হচ্ছে সুলুস অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ, মুহাক্বাক, আর্থাৎ অধিকতর বিশেল¬ষিত, মাইল অর্থাৎ ঝোঁক প্রবণ ইত্যাদি। রাজকীয পৃষ্ঠপোষকতার জন্য যেমন রিয়াসী অর্থাৎ সরকারি দিওয়ানী অর্থাৎ প্রশাসনিক। এমনকি ব্যক্তি নামেও লিপির নামকরণ হয়েছে যেমন- রায়হানী। আলী ইবনে উবাইদাহ আ রায়হানী (মৃত্যু-৮৩৪ খৃ:) এই লিপির আবিষ্কার। আকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের জন্যও নামকরণ হয়েছে যেমন- গুবার লিপি ক্ষুদ্র বালুকণার মত আকৃতির জন্য লিপিটিকে গুবার বলা হলেও আসলে লিপিটি হচ্ছে নাসখী সগীর বা ছোট নাসখ। ঝুলন্ত স্বভাবের রেখার জন্য তালিক এবং অতিমাত্রায় ঝুলন্ত ও বক্র স্বভাবের জন্য শিকাস্তে নাস্তালিক নামকরণ হয়েছে। ট্রেডিশনাল ধারায় আরোবহু প্রকার লিপি রয়েছে। আধুনিক কালে ক্যালিগ্রাফিকে পেইন্টিংয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। একে ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং হিসেবে আমরা আখ্যায়িত করছি। পেইন্টিং বা চিত্রকলার নিয়মনীতি মেনে ক্যালিগ্রাফিকে অনুষঙ্গ করে যে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম নির্মিত হচ্ছে তাকে ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং বলা হয়। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং-এর শিল্পকর্মই বেশি নিমিটত হচ্ছে। ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ে আবার দুই ধরনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ১. শৈলী নির্ভর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং ২. শুধু হরফের অবয়বকে ব্যবহার করে বা অনুষঙ্গ ধরে পেইন্টিং নির্মাণ। শৈলী নির্ভর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংয়ে ট্রেডিশনাল ধারার বৈশিষ্ট্যকে আক্ষুণœ রেখে পেইন্টিং করা হয়। অন্যদিকে আধা বিমূর্ত বা বিমূর্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে হরফের আদল দিয়ে পেইন্টিং নির্মাণ করা। এতে পেইন্টিংটিকে দেখে একটি ভাব হৃদয়ে জেগে উঠলেও বাস্তবে সেটা আমার প্রকাশ করতে পারি না।-মোহাম্মদ আবদুর রহীম

No comments:

Post a Comment