ঢাকা মহানগরীর কাকরাইলে এবি ব্যাংক’র ইসলামী ব্যাংকিং শাখা। এ শাখার প্রিন্সিপ্যাল অফিসার ও মুরাকিব জনাব মোহাম্মদ বিলাল হুসাইন মনোগ্রাম তৈরী বিষয়ে আমাকে জানালেন। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সাহেবের সাথে কয়েকটি নমুনা নিয়ে দেখা করলাম। অবশেষে একটি মনোগ্রাম মনোনীত হলো। এতে দিওয়ানী লিপি ব্যবহার করা হয়েছে। আরবীতে লেখা-‘আল মাসরাফিয়্যাহ আল ইসলামিয়্যাহ’ অর্থাৎ ইসলামিক ব্যাংকিং। আমার হাতে তৈরী মনোগ্রামটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করায় তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। - মোহাম্মদ আবদুর রহীম
Monday, February 15, 2010
হাসিব সাহেবের প্রথম সন্তান লাভের সংবাদের সাথে অভিনব উপহার
প্রথম সন্তান দুনিয়াতে আসার পর পিতা-মাতার অনুভূতি ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। পিতা তার সন্তান লাভের সুসংবাদ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছাতে সাধারণত মিষ্টি পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু হাসিব সাহেব ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিলেন। ঢাকা নগরীর নামকরা ‘খানা-খাজানা’র মিষ্টির সাথে তিনি আত্মীয়-পরিজনের কাছে পাঠালেন চমৎকার ইসলামী ক্যালিগ্রাফি। তার এ অভূতপূর্ব উপহারে সবাই খুব খুশি। তিনি আমাকে ফোন করে সে কথা জানালেন এবং আমার জন্য পাঠালেন মিষ্টির সাথে মধ্যপ্রাচ্যের খ্যাতনামা ব্রান্ডের আতর।হাসিব সাহেবের এই চমৎকার আইডিয়া আমাকে অভিভূত করেছে। দুই দিন ও দুই রাত বিরতিহীন হাত চালিয়ে পঁচিশটি ক্যালিগ্রাফি করেছি মনের তাগিদেই। উপহার হিসেবে ক্যালিগ্রাফি সত্যিই অনন্য।- মোহাম্মদ আবদুর রহীম
Friday, February 12, 2010
ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শৈল্পিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ
আর্ট অব হেভেন বলতে শিল্পকলার জগতে ইসলামী ক্যালিগ্রাফিকে বুঝানো হয়ে থাকে। গবেষকগণ একে ডেকোরেটিভ আর্ট বা অলঙ্করণ শিল্পকলা নামেও অবিহিত করে থাকেন। সাম্প্রতিককালে ব্যাপক গবেষণা ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির উপাত্ত ব্যবহার করে এ বিষয়ের পণ্ডিতগণ মত প্রকাশ করেছেন।
ইসলামী ক্যালিগ্রাফি বলে যে শিল্পকলাকে পাশ্চাত্যের পণ্ডিতগণের আমাদের সামনে ধর্মীয় গণ্ডিবদ্ধ, সীমাবদ্ধ এবং একপেশে হিসেবে তুলে ধরার প্রায়াস লক্ষ্য করা যায়, চলমান গবেষণায় সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বরং একে প্রাগ্রসর বিশুদ্ধ শিল্পকলা বলে অভিহিত করেছেন গবেষকগণ। ধর্মীয়ভাবে যেমন ইহুদী-খৃস্টান-বৌদ্ধ এমনকি হিন্দু ধর্মের সাথে সরাসরি সংশি¬ষ্ট শিল্পকলা চর্চাকে উপাসনার অংশ ধরা হয়। কিন্তু ইসলাম ক্যালিগ্রাফি চর্চার মত শিল্পকে ইবাদতের অংশ মনে করে না। ইসলামী শরীয়তে ইবাদতের বিষয় বলে একে গণ্য করা হয় না বরং শুধুমাত্র বিউটি বা সৌন্দর্যের বিষয় হিসেবে একে বিবেচনা করা হয়।
ইসলামী ক্যালিগ্রাফি মূলত আরবী বর্ণমালাকে ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী একচ্ছত্র বিশুদ্ধ শিল্পকলা হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় সমাসীন রয়েছে। সুতরাং ইসলামী ক্যালিগ্রাফির আলোচনায় এর উদ্ভব এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় অনিবার্যভাবে এসে যায়। প্রসঙ্গক্রমে আরবী হরফের গোড়ার কথা নিয়ে আলোকপাত করতে গেলে আমরা দেখতে পাই যে, এর উৎপত্তি নিয়ে ইতিহাসবিদ ও গবেষকগণের মধ্যে নানাবিধ মতামত রয়েছে কারণ ১০ম শতাব্দীর আব্বাসীয় শাসনামল থেকেই কেবলমাত্র এ সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা আমরা গবেষক ও ইতিহাসবিদগণের কাজ থেকে পেয়েছি।
আমরা জানি লিপিকলাকে ইংরেজীকে ক্যালিগ্রাফি বলে। এটি মূলতঃ গ্রীক শব্দ ক্যালিগ্রাফিয়া থেকে উৎসারিত। গ্রীক শব্দ ক্যালোস অর্থ হচ্ছে সুন্দর, চমৎকার আর গ্রাফেইন অর্থ লেখা। এ শব্দ দুটোর মিলিত রূপ থেকেই ক্যালিগ্রাফি এসেছে। শিল্পকলায় একে লিখনশিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দর্শক যখন একে হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে গ্রহন করে মূলতঃ তখনই এটা শিল্প হিসেবে আমাদের কাছে ধরা দেয়। ইসলামী ক্যালিগ্রাফি বা লাতিন ভাষায় “ক্যালিগ্রাফিয়া ইসলামিকা” হচ্ছে পবিত্র কুরআন-হাদীসের বাণী নির্ভর অনুপম শিল্প। যিনি এটা করেন তাকে আমরা লিপিকার বা কাতিব বলে থাকি। কিন্তু এই অনুলিপির সাথে যখন নান্দনিকতা যুক্ত হয় তখন তা লিপিশিল্পে পরিণত হয়। আরবীতে লিপিশিল্পকে বলা হয়, “আল খত আল আরাবী”। যিনি লিপিশিল্পী তাকে “খাত্তাত” বলে সম্বোধন করা হয়। ঠিক ইংরেজীতে ক্যালিগ্রাফি এবং ক্যালিগ্রাফার বলা হয় যথাক্রমে লিপিশিল্প ও লিপিশিল্পীকে। ফারসী ভাষায় ক্যালিগ্রাফিকে “খোশনবীশী” এবং ক্যালিগ্রাফারকে খোশনবীশ বলা হয়। তেমনিভাবে উর্দুতে “খোশখত” বা “খুতুতি” বলা হয় ক্যালিগ্রাফিকে, তুর্কী ভাষায় ক্যালিগ্রাফিকে বিশেষভাবে “রুহী হান্দেজ” অর্থাৎ অধ্যাত্মিক রেখাঙ্কন বলা হয় এবং ক্যালিগ্রাফি শিল্পীকে “হাত্তাত” সম্বোধন করা হয়। আব্বাসীয় আমলে (৭৫০-১২৫৮ খৃ.) ইসলামী ক্যালিগ্রাফির শিল্পমান পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভে সমর্থ হয়। সে সময় একজন কাতিব ও একজন খাত্তাতের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। একজন কাতিব শুধু কুরআন অনুলিপি বা কোন টেক্সট লিখেই দায়িত্ব শেষ করতেন এবং শুধুমাত্র একটি বা দু’টি লিপিতে তিনি পেশাদার হতেন। কিন্তু একজন ক্যালিগ্রাফার বা খাত্তাত প্রচলিত সবগুলো লিপিতে পেশাদার হওয়ার সাথে পুস্তক অলঙ্করণ, বাধাই, রক্ষণাবেক্ষণ-বিপণনের কাজেও সমান দক্ষ হতেন। এ ছাড়া ছাত্রদেরকে লিপির দীক্ষা দিতেন। ক্যালিগ্রাফির গোপন সূক্ষ্ম কৌশল, এর উপরকণসহ যাবতীয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান রাখতেন। প্রতি শতাব্দীতে ক্যালিগ্রাফির সর্বোচ্চ স্বার্থে ক্যালিগ্রাফার বা খাত্তাতগণ এর রক্ষণাবেক্ষণ, লালন-পালন, উন্নয়ন-প্রসারের জন্য নিবেদিত ছিলেন। এবং প্রত্যেক ক্যালিগ্রাফারই এ বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা প্রদানের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় পুস্তকাদী রচনা করেছেন এবং একটি লিপির আবিস্কারের প্রয়াস চালিয়েছেন। এ ছাড়া শিল্পসম্মত “মাস্টারপিস” কুরআনের কপি অনুলিপি করেছেন। ছাত্রদের জন্য প্রচুর “নামুজজ” বা “ওয়াসলি” অর্থাৎ অনুশীলনের জন্য নমুনা ক্যালিগ্রাফি তৈরি করতেন। ছাত্ররা সেটা অনুসরন করে ক্যালিগ্রাফি চর্চা করতেন।
ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে হৃদয়ের অব্যক্ত সুষমামণ্ডিত অনুভূতি প্রকাশের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। লিপির উৎপত্তির বিষয়ে বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার (বর্তমান ইরাক) সুমেরিয়ায় লিপির উৎপত্তি হয়েছে। আসলে লিপির উৎপত্তি সম্পর্কে সবগুলো ঐতিহাসিক সুত্র ধারণা প্রসূত। এজন্য তাদের মধ্যকার মতামতগুলোও বিভিন্ন রকমের।
গবেষক ও গ্রন্থকার মার্শাল ক্লারফিল্ড বলেন, বহিঃজগতের প্রাগ্রসর কোন সত্তা (আনুনাকি) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। ক্লারফিল্ড তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, বহিঃজগতের কোন অচেনা কিছু (এলিয়েন) সৃষ্টি তত্ত্ব বা জিনতত্ত্বের কর্মকৌশল (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং) ব্যবহার করে আড়াই লাখ বছর পূর্বে মানুষ সৃষ্টি করেছেন।১
ড. শারলে জে রোলিনসন বলেন, ৪০ হাজার বছর পূর্বে ইসরাইলে পাথরের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানুষ কাজকর্ম করত।২
প্রাচীন মানব সভ্যতার অস্তিত্বের অধিকাংশ তথ্য-উপাত্ত ও প্রত্মতাত্ত্বিক উপাদান মাধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক। খৃস্টপূর্ব ৪ হাজার ৩৫০০ বছর পূর্বে মেসোপটেমিয়ায় নূহের বন্যার কথা আমরা জানতে পারি।৩ হযরত নূহ (আঃ)-এর চারপুত্র শাম, হাম, ইয়াফস (জাপথ) ও কেনান। কেনান আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনার জন্য ডুবে মরে।৪ বর্তমান সিরিয়া, ইসরাইল ও জর্ডানের মধ্যবর্তী এলাকায় কেনান নামক স্থানে ফনেসিয়ান (কানানাইট) লিপি খৃস্টপূর্ব ১১শ’ বছর পূর্বে বিদ্যমান ছিল। ঐতিহাসিক ভিত্তিতে আরবী লিপির উৎপত্তি (অরিজিন) খুঁজতে গেলে দেখা যায় একটি সূত্র বলছে, আরবী হরফ এমনকি লাতিন লিপির জননী হচ্ছে ফনেসীয় লিপি। অর্থাৎ ফনেসীয়রাই প্রথম লিপির আবিস্কার করে।৫ লেবানন, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ার উপকুলীয় অঞ্চলে ফনেসীয়রা বাস করতো। তারা নৌপথে ভূমধ্যসাগরীয় জাতিসমূহের সাথে বাণিজ্য করত। ফলে ফনেসীয়দের লিপি ব্যাপকভাবে এসব মেডিটেরিয়ান জাতির ওপর প্রবল প্রভাব ফেলে। প্রাচীন বিশ্বের (পূর্ব ও পশ্চিম) একক কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্য। খৃস্টপূর্ব ১৩শ বছর আগে প্রাথমিক ফনেসীয় লিপি। [২২টি ব্যঞ্জন হরফ, যাতে কোন বড় হাতের (ক্যাপিটাল) হরফ ছিলো না এবং ডান থেকে বামে লেখা হতো] লেবাননের উপকূলীয় শহর বাইবলসে জন্মেছিলো। খৃস্টপূর্ব ১১ শতকে আরামাইক লিপি ফনেসীয় লিপি থেকে আরামে (সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়া) বিকশিত হয়। যেটা আরামীয় ভাষার প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। খৃস্টপূর্ব ১শ বছর পূর্বে নাবাতীয় লিপি বর্তমান জর্দানের প্রাচীন লালগোলাপ রং (রেডরোজ) শহর পেত্রায় (লোহিত সাগর থেকে উত্তরে অবস্থিত) জন্মগ্রহণ করে। এই লিপিটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে প্রসার লাভ করে। ১শ’ খৃস্টাব্দে সিরীয় (সিরিয়াক) লিপির (২২ হরফ সম্বলিত) মেসোপটেমিয়ায় জন্ম হলেও আরামাইকদের মাধ্যমে সেটার উন্নয়ন ঘটে। ঈসায়ী ১ম শতকের মধ্যভাগে প্রাথমিক আরবী লিপির উৎপত্তিস্থল হচ্ছে কুফা (ইরাকের প্রাচীন নগরী)। প্রাচীন কুফী (কৌনিক কুফী) ১৭টি হরফকৃতি বিশিষ্ট ছিল (কোন স্বরচিহ্ন, পৃথকীকরণ ফোটা বা উচ্চারণ ভিন্নতার চিহ্ন তাতে ছিলো না)। কিন্তু ইসলামের অভ্যুদযের সাথে সাথে আরবী হরফের সংখ্যা দাড়ায় ২৯টিতে (হামজাসহ)। ৭ম শতকে পবিত্র কুরআনের লিপি হিসেবে আরবী লিপির একটি বৈজ্ঞানিক সুসংহত ও শৈল্পিক অবয়ব প্রতিষ্ঠিত হয়।৬ অন্য সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি সেমেটিক ভাষা জাতির অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে- আককাদিয়ান বা ব্যবিলনিয়ান, অ্যাসিরিয়ান, আরামাইক (সিরিয়াক, মান্দিয়ান ও নাবাতিয়ান), ফনেসীয়ান বাইবেলিকান হিব্র“, কানানাইট, আরবী, সাবিয়ান বা হিমিয়ারী হাকিল, গেজ বা ইথোপীয় ভাষা বর্ণেও লোকেরা। পবিত্র কুরআনের যে ঐতিহ্যবাহিী ভাষা ও লেখন রীতি, সেটা উত্তর আরবীয়দের ভাষায় (আল আরব আল মুস্তারিবা) লেখা হয়েছে। আর উত্তর আরবীয়রা হযরত ইব্রাহীমের পুত্র হযরত ইসমাঈলের ভাষা রীতিতে কথা বলত।৭ আরবী লিপির উৎপত্তি পবিত্র কুরআন অনুসারে হযরত আদম (আঃ) প্রতি দিকনির্দেশ করে। সূরা বাকারার (২য় সূরা) ৩১নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সেসব বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাকে।” সূরা বাকারার ২য় আয়াতে বলা হয়েছে,“এটি এমন এক কিতাব (পবিত্র কুরআন) যাতে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।” এ আয়াতে কিতাব শব্দটি কাতাবা থেকে এসেছে অর্থাৎ লিখিত বস্তু। কাতাবা শব্দটি বিভিন্নভাবে ও রূপে পবিত্র কুরআনে ৩১৯ বার এসেছে। পবিত্র কুরআনসহ প্রধান চারটি ঐশী গ্রন্থকে কিতাব বলে উল্লে¬খ করা হয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে লেখনীর ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের শুধু নয় বং মানব সৃষ্টি তথা পৃথিবীতে মানবের আগমনের সাথে লেখার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমরা জেনেছি পবিত্র কুরআন যেমন আরবী ভাষায় (আরবী লিপিতে) অবতীর্ণ হয়েছে।৮ তেমনিভাবে তাওরাত অবতীর্ণ হয়েছে ইবরানী (হিব্র“) ভাষায়, যাবুর অবতীর্ণ হয়েছে ইউনানী (গ্রীক) ভাষায় এবং ইঞ্জিল অবতীর্ণ হয় সুরইয়ানী (সিরিয়াক) ভাষায়। নূহ (আঃ)-এর তিন পুত্র শাম, হাম . ইয়াফসকে যথাক্রমে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের জনগোষ্ঠীর পূর্ব-পুরুষ ধরা হয়।৯ শামের বংশধরদের সেমেটিক রূপে গণ্য করা হয়। আর আরাম, আসুর এবং অন্যান্য যেমন- বাইবেল এদের আরব, আরামিয়ান, আসিরিয়ান, ব্যবিলনিয়ান, চাাঁদিয়ান, সাবায়িয়ান, হিব্র“ ইত্যাদি ভাষা গোত্রের লোকেরাই শামের বংশধরদের অন্তর্ভূক্ত।১০ অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, খৃস্টপূর্ব ৩ হাজার বছর পূর্বে নদী তীরবর্তী ভেজা নরম মাটিতে কোন মানুষ হয়ত খেয়ালের বশে আনমনে দাগ কেটেছিল। সেটা থেকেই লিখন পদ্ধতির জন্ম হয়। সেই দাগগুলো গোঁজ বা ছাতিওয়ালা বড় পেরেক কিংবা কীলকাকার সদৃশ দেখতে। মোটকথা সরল রেখার মাথায় ত্রিভুজাকৃতির মত বসিয়ে, এই লেখনরীতি কিউনিফর্ম লিপি হিসেবে পরিচিতি পায়।১১ আরবীতে যাকে আল খত আল মাসমারী বলা হয়। পূর্বেই উলে¬খ করা হয়েছে, আদম (আঃ) কে আল্ল¬াহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) সব বস্তুর নাম শিখিয়েছেন, নবী আদমের (আঃ) কাছ থেকে পুত্র শীষ (আঃ) আরবী লেখা আয়ত্ত করে চর্চা করেন।১২ হযরত আবদুল্ল¬াহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, হযরত ঈসমাইল (আঃ) মাত্র ১৪ বছর বয়সে আরবী ভাষা বলতে ও লিখতে সক্ষম হয়েছিলেন।১৩ সুতরাং হযরত আদম (আঃ) কেই আরবী হরফের আবিষ্কর্তা বলতে পারি তারপর শীষ (আঃ) এবং ইসমাঈল (আঃ) একে যথাযথ পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন। তবে বেশ কয়েকজন গবেষক হযরত ইদরিস (আঃ) কে আরবী হরফের আবিষ্কর্তা বলে মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি মাকালী বৈশিষ্ট্যের আরবী লিপির জনক ছিলেন।১৪ প্রাচীন আরবীর সমসাময়িক কয়েকটি ভাষা বেশ প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। সেগুলো হচ্ছে, সুরইয়ানী (সিরিয়াক) , আরামাইক, গ্রীক, ইথোপীয়, ফারসী, সংস্কৃত ও কিবতী১৫ ভাষা।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রাচীন নাবাতী আরবী লিপির নমুনা হচেছ, ২৫০ খৃস্টাব্দে উম্মুল জিমালের সমাধি গাত্রের প্রস্তরফলক।১৬ মধ্য ফোরাত অঞ্চলের আরব ভূমির রাজধানী ছিল হিরা। অবশ্য ইতিহাসবিদগণের অনেকেই এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই উত্তর আরব ভূমির ২৫জন শাসকের উল্লে¬খ পাওয়া যায় ইতিহাসে। এদের মধ্যে প্রথম দিকের শাসক ইমরাউল কায়েস বিন আমর বিন আদি (২৮৮-৩২৮খৃ.) এবং আরেকজন হচ্ছেন নোমান বিন মুনযির (৫৮০-০২খৃ.)। আল দুরুজ পর্বতের নাম্মারাহ নামক স্থানে ইমরাউল কায়েসের সমাধিফলক পাওয়া যায়। এটির ভাষাও নাবাতী আরবী। ১৭
৫১২ খৃস্টাব্দে জাবাদে প্রাপ্ত শিলালিপিটিতে গ্রীক, সিরিয়াক ও আরবী ভাষায় লেখা হয়েছে, জাবাদ হচ্ছে বর্তমান পূর্ব-দক্ষিণ হালিব, যেটা ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত। এই শিলালিপিতে তারিখ লেখা হয়েছে গ্রীক ভাষায়।১৮ কয়েকটি শিলালিপির কথা এখানে উল্লেখ করা হলো। এ ছাড়া আসিস শিলালিপি (৫২৮ খৃ.), ফাররান উপত্যকা শিলালিপি (২৩০ খৃ.), তুরে সিনাই শিলালিপি (২৫৩ খৃ.), মাদায়েন সালেহ শিলালিপি (৫৬৮ খৃ.) প্রভৃতির প্রমাণ আমাদের সামনে রয়েছে। এগুলো ব্যতিরেকে বহুকিছুই আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। আরব ইতিহাসবিদগণ বলছেন, হযরত আদম (আঃ) সর্বপ্রথম পৃথিবীতে লিপি নিয়ে আসেন। আর নূহের (আঃ) মহাপ্ল¬াবনের পর হযরত ইসমাঈল (আঃ) সে লিপি উদ্ধার করেন। অথবা সে লিপিকে আরবরা হিরা থেকে, আর হিরাবাসী আম্বর থেকে, আম্বরের অধিবাসীরা ইয়ামন থেকে, সেখানকার আরবরা সেটা আরেবাহ থেকে, যেটা তারা আদনান ভূমি থকে এনেছিল।১৯
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ে উত্তর আরবীয় লিপিতে কুরআন লেখা হয়। সে লিপিতে হরফের স্বাতন্ত্র্য পরিচয় রক্ষার জন্য ফোটার (নোকতা) ব্যবহার করা হয়। আব্বাসীয় আমলে এসে তাতে জের, জবর, পেশ প্রভৃতি হরকতের ব্যবহার করা হয়।
এখানে লেখ্য আরবীলিপির বিষয়ে একটু বলা প্রয়োজন মনে করছি। দুটো প্রধান ধারায় লেখ্য আরবীলিপির ব্যবহার চালু রয়েছে। এক. ক্লাসিক বা ঐতিহ্যিক আরবী, এটা মূলত কুরআন এবং ঐতিহ্যিক সাহিত্যের ভাষা। এটা আধুনিক মানসম্পন্ন আরবী ভাষার সাথে স্টাইল ও উচ্চারণগত পার্থক্য নির্দেশ করে। পবিত্র কুরআনের ভাষা ও লেখনরীতি যেটাকে এর ভিত্তি ধারা হয় এবং এর বহু তাফসির অর্থাৎ ব্যাখ্যা এবং বিশদ আলোচনামূলক রচনা আধুনিক আরবীতে করা হয়েছে। দুই. আধুনিক আদর্শমান (স্ট্যান্ডার্ড) আরবী এটা বিশ্বব্যাপী পরিচিতও আধুনিক আরব দেশগুলোর সকল মানুষের বোধগম্য আদর্শমান আরবী ভাষা। এই আরবীর অধিকাংশ হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত বক্তৃতা, পুস্তক এবং টিভি শো'তে ব্যবহৃত ভাষা। এছাড়া প্রতিটি আরবীভাষী দেশের মধ্যে স্থানীয়ভাবে কিছু নিজস্ব উচ্চারণ ও স্বাতন্ত্র্য লেখন রীতিরও দেখা মেলে। কবিতা, সাহিত্য, কার্টুন ও কমিক্স-এ এই বিচিত্র স্থাণিকতার প্রয়োগ দেখা যায়।২০
আরবী লিপির ক্যালিগ্রাফিতে প্রকাশ মূলতঃ পবিত্র কুরআন অনুলিপির মাধ্যমে শুরু হয়। আরবী লিপির উন্নয়ন, প্রসার-প্রাচারে রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে নিরক্ষর হলেও তাঁর সীলমোহরটি ক্যালিগ্রাফির প্রথম নমুনা হিসেবে উল্লে¬খ করতে হয়। কারণ আরবীলিপির যে লিখনরীতি যেমন ডান থেকে বামে এবং ছত্রগুলো উপর থেকে নিচে নিম্নগামী। যেটা সে সময়ের তথ্য-প্রমাণে আমরা দেখতে পাই। কিন্তু রাসূলের (সাঃ) সীলমোহরটি এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম এবং ক্যালিগ্রাফির প্রথম কম্পোজিশন ধারণার প্রমাণ। এতে উল্লম্বভাবে উপর-নীচ তিনটি শব্দ রয়েছে। আল্ল¬াহ-রাসূল-মুহাম্মদ ।২১ যদি উপর থেকে পড়ে যাই তাহলে বাক্য শুদ্ধ হয় না। অথচ এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। এখানে পড়তে হবে নীচ থেকে ওপরে অর্থাৎ মুহাম্মদ রাসূল আল্লাহ, এখন বাক্য হল, আর অর্থ ঠিক হচ্ছে অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) আল্ল¬াহর রাসূল। এই মোহরে সর্বপ্রথম আমরা সাধারণ নিয়মের ব্যত্যয় দেখি। এর মূল কারণ হচ্ছে আ¬ল্লাহ শব্দকে উপরে রাখা। এটা অনুসরণ করে পরবর্তী সমস্ত ক্যালিগ্রাফির কম্পোজিশনে আল্লাহ শব্দকে উপরে রাখা হয়। যতটুকু জানা যায়, আরবী লিপির প্রথম কাতিব ছিলেন মারামিররাহ বিন মিররাহ এবং আসলাম বিন সাদরাহ, তারা দু’জন আম্বরের অধিবাসী ছিলেন। তবে যিনি আম্বর থেকে নাবাতীলিপি এনে মক্কায় মানুষদের শিখিয়েছিলেন, তার নাম হচ্ছে বিশর বিন আবদুল মালিক। তিনি আবু সুফিয়ানের বোন সুহবা বিনতে হারবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার প্রচেষ্টায় লিপিটি আরবী গঠনে সংস্কার হয় এবং হেযাযে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। রাসূলের সাহাবীদের মধ্যে ওসমান বিন আফফান ও মারওয়ান বিন হাকাম ইসলাম পূর্ব সময়ে ছোটবেলায় একই মক্তবে আরবী লেখা শিখেন। এছাড়া মুয়াবিয়া বিন আবু সুফইয়ান, আলী বিন আবু তালিব ও যায়েদ বিন সাবিত আল আনসারী আম্বারী লিপিকারদের চেয়েও সুন্দর করে লিখতে পারতেন।
ওহী অবতীর্ণের সাথে সাথে তা লিখে রাখার জন্য রাসূল (সাঃ) বিশেষভাবে কয়েকজন সাহাবীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।২২ এছাড়া মুসলিম মহিলাদের লেখাপড়া শিক্ষা দেয়ার জন্য হাফসাকে [রাসূলের (সাঃ) স্ত্রী] নির্দেশ দেন। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরে বিজিত কুরাইশ বন্দীদের মুক্তিপণস্বরূপ ১০ জন মুসলিমকে লেখাপড়া শেখানোর শর্ত প্রদান করেন। এদের মধ্যে হাফিনাহ আল নাসরানী অন্যতম। মদিনায় ইহুদীদের সন্তানেরা লেখাপড়া শিক্ষার জন্য যায়েদ বিন সাবিত আল আনসারীর কাছে আসত। রাসূল (সাঃ) যায়েদকে সহায়তার জন্য উবাই বিন কাব, উসাইদ বিন হুদাইর, বিশর বিন সাঈগ ও মা’আন বিন আদিকে নির্দেশ দেন। তারা ব্যাপকভাবে মানুষদেরকে লেখাপড়া শেখানোর প্রয়াস অব্যাহত রাখেন।
পবিত্র কুরআনে লেখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আজকাল লেখালেখির যুগ। লেখাই মুখের কথার স্থালাভিষিক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু চৌদ্দশ’ বছর পূর্বের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তখন দুনিয়ার সব কাজ কারবার ও ব্যবসা বাণিজ্য মুখে মুখেই চলতো, লেখালেখি এবং দলিল দস্তাবেজের প্রথা প্রচলন ছিল না। সর্বপ্রথম কুরআন পাক এদিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বলা হয়েছে, "তোমরা যখন পরস্পর নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ধার কর্জের কারবার কর, তখন তা লিখে নাও।”২৩ আল্ল¬াহ (সুবহানাহুওয়া তায়ালা) বলেন, আর তার [হযরত মুসা (আঃ)] জন্য তখতীতে (লেখার জন্য মসৃণ সমতল পৃষ্ঠ সম্বলিত পাথর, কাঠ, মাটির প্রভৃতির প্যালেট) লিখে দিয়েছি সর্বপ্রকার উপদেশ ও বিস্তারিত সব বিষয়।”২৪ পবিত্র কুরআনে সূরা কলম ও সূরা আলাকে যথাক্রমে কলমের শপথ ও কলমের মাধমে মানুষকে শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) সুন্দর হস্তলিখনের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ”তোমরা লেখনীর মাধ্যমে জ্ঞানকে ধারণ কর।”২৫ “পিতা-মাতার কাছে সন্তানের (৩টি) অধিকার রয়েছে, প্রথমতঃ সন্তানকে উত্তম লেখা শেখাবে, দ্বিতীয়তঃ তার একটা সুন্দর নাম রাখবে এবং তৃতীয়তঃ প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে।”২৬ রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, “উত্তম হাতের লেখা সত্যের উজ্জ্বলতাকে বাড়িয়ে দেয়।”২৭
ইসলামের আবির্ভাবের প্রথমদিকে যে টানা ধরনের লেখা ছিল সেটাকে “লায়িন” নামে অভিহিত করা হয়। সামনে ঝুঁকানো রেখা ও দ্রুত লেখার এ মোলায়েম স্বভাবের আরেকটি লিপি বেশ জনব্যবহৃত ছিল, লিপিটি মোটা ডগা বিশিষ্ট কলমে লেখা হতো। “ইয়াবিস” নামে কর্কশ স্বভাবের আরেকটি লিপির প্রচলন ছিল। সেটা মূলত ট্যান করা চামড়ায় কিংবা পাথরের বা খেজুর পাতে খোদাই করে লেখা হতো। পবিত্র কুরআন অনুলিপিতেও এই লিপির ব্যবহার হত।২৮ পরবর্তীতে উমাইয়া আমলে (৬৬১-৭৫০ খৃ,) লায়িন লিপি থেকে ক্যালিগ্রাফি লেখার উদ্ভব হয়। উমাইয়া আমলে একটি বিস্ময়কর আরবী লিপির উদ্ভব ঘটে। অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ও সূক্ষ্ম বাঁক সম্বলিত এবং লিখতে কম জায়গা লাগে, এ লিপির নাম হচ্ছে মাশক লিপি। যদিও গবেষকগণ বলেন, এটি তার আসল নাম নয়, বাহরাইনের বাইতুল কুরআন মিউজিয়ামে এর একটি চমৎকার নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ ও তথ্যাদি থেকে জানা যায়, সে সময় আরবী লিপির বেশ কয়েক প্রকার স্টাইল ব্যবহার হতো।২৯ তবে একথা অস্বীকার করা যায় না যে, উমাইয়া আমলেই প্রথমবারের মত লেখার দৃষ্টিকোণ থেকে পরিপক্ক ক্যালিগ্রাফিতে উত্তরণের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। বায়তুল মুকাদ্দাসের কুব্বাতুছ ছাখরা মসজিদের গম্বুজের চারদিক ঘিরে উৎকীর্ণ করে লেখা পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলো হিজরী প্রথম শতাব্দীর ক্যালিগ্রাফির নিদর্শন হিসেবে এখনও টিকে আছে। বস্তুত এসব ক্যালিগ্রাফি ছিল শিল্পকলার জগতে এক নতুন উদ্ভাবন। মোজাইক টালির ওপরকার এ ক্যালিগ্রাফিগুলো পুরোপুরি পাঠযোগ্য এবং পবিত্র কুরআনের আয়াতের সর্বপ্রথম শিল্পসম্মত বড় আকারের লেখা। ইসলামের ইতিহাসে ১শ বছর পূর্ণ না হতেই হিজরী ৭ম দশকে এ ধরনের চমৎকার ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম তৈরী নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর ব্যাপার। গম্বুজের চারপাশ ঘিরে এই ক্যালিগ্রাফি স্থাপনের দর্শনগত ধারণাও অত্যন্ত গুরুত্বের দাবি রাখে। কারণ এটা অসীমত্বের বোধ জাগ্রত করে। অর্থাৎ আল্ল¬াহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) যে অসীম, তা এই ক্যালিগ্রাফি দেখে অনুভব করা যায়। ইসলামী ক্যালিগ্রাফি বিভিন্ন মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়। কাগজে, পার্চমেন্টে, অর্থাৎ বই পুস্তক রচনায় শৈল্পিক ব্যবহার যেমন শুরু হয়, তেমনি স্থাপত্য ক্যালিগ্রাফির বিষয়টি মুসলিম শিল্পীদের একান্ত নিজস্ব উদ্ভাবন। এতে লিপির উপযোগিতা ও ব্যবহার তাদের সুচিন্তিত শৈল্পিক মানসের প্রকাশ ঘটিয়েছে। স্থাপত্যের কর্কশ ও শক্ত স্বভাবের জন্য কৌনিক ধারার লিপি যেমন কুফি লিপি এবং কুফি লিপির স্থানীয় প্রকার যেমন আন্দালুসী কুফির ব্যবহার শিল্পবোদ্ধাদের মুগ্ধ করেছে। উমাইয়া আমলের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের অন্যতম হচ্ছেন যাহহাক ইবনে আজলান ও ইউসুফ ইবনে হাম্মাদ। তাদের জীবনের ব্রত ছিল ক্যালিগ্রাফিকে শিল্পনৈপুণ্যের শীর্ষে নিয়ে যাওয়া। তারা ব্যবসায়িক লক্ষ্যে কখনও শিল্পকর্ম তৈরি করতেন না। এ জন্যই মাত্র হিজরী ৩য় শতকের শেষ দিকে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির গোটা প্রাসাদ পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে। কারণ সে সময় বিপুল সংখ্যায় পবিত্র কুরআনের অনুলিপি হয় এবং সেটাতে বিভিন্ন মাত্রায় শৈল্পিক নিপুণতা প্রয়োগ করা হয়। এতে করে লিখিত উপকরণাদির বেচাকেনা শুরু হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মের প্রতি প্রবল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। বাণিজ্যিকভাবে শিল্পকর্মের উপকরণাদি উৎপাদিত হতে থাকে। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা প্রচলিত হয় এবং এ শিল্পকলাকে সুন্দর প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান বলে গণ্য করা হতে থাকে। ফলে সম্পূর্ণ নতুন একটি ক্ষেত্র অর্থাৎ গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ করা, পেশাজীবী, পেশাদার, সৌখিন শিল্পী, শিল্পকলার বিচারক এবং শিল্পকর্ম ও শিল্পে ব্যবহার্য উপকরণাদির বিক্রির জন্য বাজারের সৃষ্টি হয়।৩০ শিল্পকর্মের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্যালিগ্রাফি তৈরি শুরু হয়। সহজ মাধ্যম হিসেবে কাগজে, প্যাপিরাসে শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে ঝিল্ল¬ী ও চামড়ার ব্যবহার উঠে যায়। আব্বাসীয় যুগের (৭৫১-১২৫৮ খৃ.) প্রথমদিকেই পবিত্র কুরআনের জন্য কয়েকটি লিপি যেমন- নাসখী, রিকা, সুলুস, রায়হানী, মুহাক্কাক প্রভৃতি নির্দিষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপভাবে কুরআন বহির্ভূত বিভিন্ন বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক স্টাইলের লিপির ব্যবহারও প্রায় নির্দিষ্ট হয়ে যায়। বস্তুত বই-পুস্তক লেখার জন্য অধিকতর সুস্পষ্ট ও সহজ পঠনযোগ্য, বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোন থেকে মুক্ত ও সাংস্কৃতিক বিকাশের দাবি পূরণকারী এসব লিপির উদ্ভাবন ছিল অপরিহার্য। সহজ লিখনযোগ্য ও বিশেষ ব্যবহারের লক্ষ্যে উদ্ভাবিত এসব লিপি আলাদা আলাদাভাবে সরকারী দলিল-দস্তাবেজ, চিঠিপত্র, কেনাকাটার তালিকা, শ্রবণ থেকে অনুলিখন, এমনকি কবুতরের মাধ্যমে প্রেরণের চিঠির জন্য লেখা হতো। আব্বাসীয় আমলেই বাগদাদ ক্যালিগ্রাফি উৎপাদনের কারখানা স্বরূপ গড়ে উঠে। বাগদাদের এসময়কার ক্যালিগ্রাফি শিল্পের শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ সম্পর্কে ইয়াসির তাব্বা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। সত্যিকার চারুকলার বিষয় হিসেবে ক্যালিগ্রাফিকে (ক্লাসিক অর্থে) সুসংহত করেন রাজনীতিবিদ, কবি ও ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আবু আলী ইবনে মুকলা (মৃ. ৯৪০খৃ.) এবং তার ভাই ও ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মুকলা (মৃ. ৯৪৯ খৃ.)। তারা দু’ভাই ক্যালিগ্রাফিকে আনুপাতিক লেখনীতে বিন্যস্ত এবং একে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেন। যেটা ক্যালিগ্রাফির শিল্পমানকে উত্তরোত্তর শাণিত করে। ইবনে মুকলার ছাত্র আলী ইবনে হিলাল ইবনে বাওয়াব (মৃ. ১০২২ খৃ.) হচ্ছেন ইসলামের ইতিহাসে দর্শনীয় শিল্পকর্মের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী। একাধারে অভ্যন্তরীণ চিত্রকর (Interior Painter) ও ক্যালিগ্রাফির প্রতি অত্যন্ত একনিষ্ঠ হওয়ায় ইবনে বাওয়াব এ শিল্পকে শিল্পকলার শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এছাড়া ইয়াকুত আল মুস্তাসিমী (মৃ. ১২৯৮ খৃ.) ক্যালিগ্রাফির ট্রেডিশনাল ধারাকে সঠিক মাপে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ভবিষ্যত শিল্পকলায় লিভিং আর্ট হিসেবে একে স্থাপন করেন।যুগের পরিক্রমায় ইসলামী ক্যালিগ্রাফি পশ্চিমে মাগরিব বা মরক্কো থেকে পূর্বে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত একটি প্রভাব বিস্তারকারী শিল্পধারা হিসেবে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বিস্তার লাভের পর এতে নানামুখী স্টাইল ও ধারা যেমন জন্মলাভ করে তেমনি সাংস্কৃতিক বিকাশে স্থানীয় উপায়-উপকরণকে আত্মস্থের মাধ্যমে এটি বিস্ময়কর শিল্পে রূপলাভ করে। এ শিল্পের সংস্কার সাধনে প্রায় প্রতি শতাব্দীতে প্রয়াস চালাতে হয়েছে। ১৩৮০ খ্রীস্টাব্দে আনাতোলিয়ার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফির ওস্তাদ ও শিল্পী সেইহ্ হামদুল্ল¬াহ ক্যালিগ্রাফির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সাধনে ব্রতী হন এবং মাত্র দুই বছরে তিনি এর যাবতীয় খুঁটিনাটি বিন্যস্ত করেন এবং সাফল্যের সাথে একে পূর্ণতা দান করেন।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রাচীন নাবাতী আরবী লিপির নমুনা হচেছ, ২৫০ খৃস্টাব্দে উম্মুল জিমালের সমাধি গাত্রের প্রস্তরফলক।১৬ মধ্য ফোরাত অঞ্চলের আরব ভূমির রাজধানী ছিল হিরা। অবশ্য ইতিহাসবিদগণের অনেকেই এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই উত্তর আরব ভূমির ২৫জন শাসকের উল্লে¬খ পাওয়া যায় ইতিহাসে। এদের মধ্যে প্রথম দিকের শাসক ইমরাউল কায়েস বিন আমর বিন আদি (২৮৮-৩২৮খৃ.) এবং আরেকজন হচ্ছেন নোমান বিন মুনযির (৫৮০-০২খৃ.)। আল দুরুজ পর্বতের নাম্মারাহ নামক স্থানে ইমরাউল কায়েসের সমাধিফলক পাওয়া যায়। এটির ভাষাও নাবাতী আরবী। ১৭
৫১২ খৃস্টাব্দে জাবাদে প্রাপ্ত শিলালিপিটিতে গ্রীক, সিরিয়াক ও আরবী ভাষায় লেখা হয়েছে, জাবাদ হচ্ছে বর্তমান পূর্ব-দক্ষিণ হালিব, যেটা ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত। এই শিলালিপিতে তারিখ লেখা হয়েছে গ্রীক ভাষায়।১৮ কয়েকটি শিলালিপির কথা এখানে উল্লেখ করা হলো। এ ছাড়া আসিস শিলালিপি (৫২৮ খৃ.), ফাররান উপত্যকা শিলালিপি (২৩০ খৃ.), তুরে সিনাই শিলালিপি (২৫৩ খৃ.), মাদায়েন সালেহ শিলালিপি (৫৬৮ খৃ.) প্রভৃতির প্রমাণ আমাদের সামনে রয়েছে। এগুলো ব্যতিরেকে বহুকিছুই আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। আরব ইতিহাসবিদগণ বলছেন, হযরত আদম (আঃ) সর্বপ্রথম পৃথিবীতে লিপি নিয়ে আসেন। আর নূহের (আঃ) মহাপ্ল¬াবনের পর হযরত ইসমাঈল (আঃ) সে লিপি উদ্ধার করেন। অথবা সে লিপিকে আরবরা হিরা থেকে, আর হিরাবাসী আম্বর থেকে, আম্বরের অধিবাসীরা ইয়ামন থেকে, সেখানকার আরবরা সেটা আরেবাহ থেকে, যেটা তারা আদনান ভূমি থকে এনেছিল।১৯
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ে উত্তর আরবীয় লিপিতে কুরআন লেখা হয়। সে লিপিতে হরফের স্বাতন্ত্র্য পরিচয় রক্ষার জন্য ফোটার (নোকতা) ব্যবহার করা হয়। আব্বাসীয় আমলে এসে তাতে জের, জবর, পেশ প্রভৃতি হরকতের ব্যবহার করা হয়।
এখানে লেখ্য আরবীলিপির বিষয়ে একটু বলা প্রয়োজন মনে করছি। দুটো প্রধান ধারায় লেখ্য আরবীলিপির ব্যবহার চালু রয়েছে। এক. ক্লাসিক বা ঐতিহ্যিক আরবী, এটা মূলত কুরআন এবং ঐতিহ্যিক সাহিত্যের ভাষা। এটা আধুনিক মানসম্পন্ন আরবী ভাষার সাথে স্টাইল ও উচ্চারণগত পার্থক্য নির্দেশ করে। পবিত্র কুরআনের ভাষা ও লেখনরীতি যেটাকে এর ভিত্তি ধারা হয় এবং এর বহু তাফসির অর্থাৎ ব্যাখ্যা এবং বিশদ আলোচনামূলক রচনা আধুনিক আরবীতে করা হয়েছে। দুই. আধুনিক আদর্শমান (স্ট্যান্ডার্ড) আরবী এটা বিশ্বব্যাপী পরিচিতও আধুনিক আরব দেশগুলোর সকল মানুষের বোধগম্য আদর্শমান আরবী ভাষা। এই আরবীর অধিকাংশ হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত বক্তৃতা, পুস্তক এবং টিভি শো'তে ব্যবহৃত ভাষা। এছাড়া প্রতিটি আরবীভাষী দেশের মধ্যে স্থানীয়ভাবে কিছু নিজস্ব উচ্চারণ ও স্বাতন্ত্র্য লেখন রীতিরও দেখা মেলে। কবিতা, সাহিত্য, কার্টুন ও কমিক্স-এ এই বিচিত্র স্থাণিকতার প্রয়োগ দেখা যায়।২০
আরবী লিপির ক্যালিগ্রাফিতে প্রকাশ মূলতঃ পবিত্র কুরআন অনুলিপির মাধ্যমে শুরু হয়। আরবী লিপির উন্নয়ন, প্রসার-প্রাচারে রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে নিরক্ষর হলেও তাঁর সীলমোহরটি ক্যালিগ্রাফির প্রথম নমুনা হিসেবে উল্লে¬খ করতে হয়। কারণ আরবীলিপির যে লিখনরীতি যেমন ডান থেকে বামে এবং ছত্রগুলো উপর থেকে নিচে নিম্নগামী। যেটা সে সময়ের তথ্য-প্রমাণে আমরা দেখতে পাই। কিন্তু রাসূলের (সাঃ) সীলমোহরটি এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম এবং ক্যালিগ্রাফির প্রথম কম্পোজিশন ধারণার প্রমাণ। এতে উল্লম্বভাবে উপর-নীচ তিনটি শব্দ রয়েছে। আল্ল¬াহ-রাসূল-মুহাম্মদ ।২১ যদি উপর থেকে পড়ে যাই তাহলে বাক্য শুদ্ধ হয় না। অথচ এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। এখানে পড়তে হবে নীচ থেকে ওপরে অর্থাৎ মুহাম্মদ রাসূল আল্লাহ, এখন বাক্য হল, আর অর্থ ঠিক হচ্ছে অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) আল্ল¬াহর রাসূল। এই মোহরে সর্বপ্রথম আমরা সাধারণ নিয়মের ব্যত্যয় দেখি। এর মূল কারণ হচ্ছে আ¬ল্লাহ শব্দকে উপরে রাখা। এটা অনুসরণ করে পরবর্তী সমস্ত ক্যালিগ্রাফির কম্পোজিশনে আল্লাহ শব্দকে উপরে রাখা হয়। যতটুকু জানা যায়, আরবী লিপির প্রথম কাতিব ছিলেন মারামিররাহ বিন মিররাহ এবং আসলাম বিন সাদরাহ, তারা দু’জন আম্বরের অধিবাসী ছিলেন। তবে যিনি আম্বর থেকে নাবাতীলিপি এনে মক্কায় মানুষদের শিখিয়েছিলেন, তার নাম হচ্ছে বিশর বিন আবদুল মালিক। তিনি আবু সুফিয়ানের বোন সুহবা বিনতে হারবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার প্রচেষ্টায় লিপিটি আরবী গঠনে সংস্কার হয় এবং হেযাযে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। রাসূলের সাহাবীদের মধ্যে ওসমান বিন আফফান ও মারওয়ান বিন হাকাম ইসলাম পূর্ব সময়ে ছোটবেলায় একই মক্তবে আরবী লেখা শিখেন। এছাড়া মুয়াবিয়া বিন আবু সুফইয়ান, আলী বিন আবু তালিব ও যায়েদ বিন সাবিত আল আনসারী আম্বারী লিপিকারদের চেয়েও সুন্দর করে লিখতে পারতেন।
ওহী অবতীর্ণের সাথে সাথে তা লিখে রাখার জন্য রাসূল (সাঃ) বিশেষভাবে কয়েকজন সাহাবীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।২২ এছাড়া মুসলিম মহিলাদের লেখাপড়া শিক্ষা দেয়ার জন্য হাফসাকে [রাসূলের (সাঃ) স্ত্রী] নির্দেশ দেন। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরে বিজিত কুরাইশ বন্দীদের মুক্তিপণস্বরূপ ১০ জন মুসলিমকে লেখাপড়া শেখানোর শর্ত প্রদান করেন। এদের মধ্যে হাফিনাহ আল নাসরানী অন্যতম। মদিনায় ইহুদীদের সন্তানেরা লেখাপড়া শিক্ষার জন্য যায়েদ বিন সাবিত আল আনসারীর কাছে আসত। রাসূল (সাঃ) যায়েদকে সহায়তার জন্য উবাই বিন কাব, উসাইদ বিন হুদাইর, বিশর বিন সাঈগ ও মা’আন বিন আদিকে নির্দেশ দেন। তারা ব্যাপকভাবে মানুষদেরকে লেখাপড়া শেখানোর প্রয়াস অব্যাহত রাখেন।
পবিত্র কুরআনে লেখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আজকাল লেখালেখির যুগ। লেখাই মুখের কথার স্থালাভিষিক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু চৌদ্দশ’ বছর পূর্বের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তখন দুনিয়ার সব কাজ কারবার ও ব্যবসা বাণিজ্য মুখে মুখেই চলতো, লেখালেখি এবং দলিল দস্তাবেজের প্রথা প্রচলন ছিল না। সর্বপ্রথম কুরআন পাক এদিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বলা হয়েছে, "তোমরা যখন পরস্পর নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ধার কর্জের কারবার কর, তখন তা লিখে নাও।”২৩ আল্ল¬াহ (সুবহানাহুওয়া তায়ালা) বলেন, আর তার [হযরত মুসা (আঃ)] জন্য তখতীতে (লেখার জন্য মসৃণ সমতল পৃষ্ঠ সম্বলিত পাথর, কাঠ, মাটির প্রভৃতির প্যালেট) লিখে দিয়েছি সর্বপ্রকার উপদেশ ও বিস্তারিত সব বিষয়।”২৪ পবিত্র কুরআনে সূরা কলম ও সূরা আলাকে যথাক্রমে কলমের শপথ ও কলমের মাধমে মানুষকে শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) সুন্দর হস্তলিখনের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ”তোমরা লেখনীর মাধ্যমে জ্ঞানকে ধারণ কর।”২৫ “পিতা-মাতার কাছে সন্তানের (৩টি) অধিকার রয়েছে, প্রথমতঃ সন্তানকে উত্তম লেখা শেখাবে, দ্বিতীয়তঃ তার একটা সুন্দর নাম রাখবে এবং তৃতীয়তঃ প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে।”২৬ রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, “উত্তম হাতের লেখা সত্যের উজ্জ্বলতাকে বাড়িয়ে দেয়।”২৭
ইসলামের আবির্ভাবের প্রথমদিকে যে টানা ধরনের লেখা ছিল সেটাকে “লায়িন” নামে অভিহিত করা হয়। সামনে ঝুঁকানো রেখা ও দ্রুত লেখার এ মোলায়েম স্বভাবের আরেকটি লিপি বেশ জনব্যবহৃত ছিল, লিপিটি মোটা ডগা বিশিষ্ট কলমে লেখা হতো। “ইয়াবিস” নামে কর্কশ স্বভাবের আরেকটি লিপির প্রচলন ছিল। সেটা মূলত ট্যান করা চামড়ায় কিংবা পাথরের বা খেজুর পাতে খোদাই করে লেখা হতো। পবিত্র কুরআন অনুলিপিতেও এই লিপির ব্যবহার হত।২৮ পরবর্তীতে উমাইয়া আমলে (৬৬১-৭৫০ খৃ,) লায়িন লিপি থেকে ক্যালিগ্রাফি লেখার উদ্ভব হয়। উমাইয়া আমলে একটি বিস্ময়কর আরবী লিপির উদ্ভব ঘটে। অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ও সূক্ষ্ম বাঁক সম্বলিত এবং লিখতে কম জায়গা লাগে, এ লিপির নাম হচ্ছে মাশক লিপি। যদিও গবেষকগণ বলেন, এটি তার আসল নাম নয়, বাহরাইনের বাইতুল কুরআন মিউজিয়ামে এর একটি চমৎকার নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ ও তথ্যাদি থেকে জানা যায়, সে সময় আরবী লিপির বেশ কয়েক প্রকার স্টাইল ব্যবহার হতো।২৯ তবে একথা অস্বীকার করা যায় না যে, উমাইয়া আমলেই প্রথমবারের মত লেখার দৃষ্টিকোণ থেকে পরিপক্ক ক্যালিগ্রাফিতে উত্তরণের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। বায়তুল মুকাদ্দাসের কুব্বাতুছ ছাখরা মসজিদের গম্বুজের চারদিক ঘিরে উৎকীর্ণ করে লেখা পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলো হিজরী প্রথম শতাব্দীর ক্যালিগ্রাফির নিদর্শন হিসেবে এখনও টিকে আছে। বস্তুত এসব ক্যালিগ্রাফি ছিল শিল্পকলার জগতে এক নতুন উদ্ভাবন। মোজাইক টালির ওপরকার এ ক্যালিগ্রাফিগুলো পুরোপুরি পাঠযোগ্য এবং পবিত্র কুরআনের আয়াতের সর্বপ্রথম শিল্পসম্মত বড় আকারের লেখা। ইসলামের ইতিহাসে ১শ বছর পূর্ণ না হতেই হিজরী ৭ম দশকে এ ধরনের চমৎকার ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম তৈরী নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর ব্যাপার। গম্বুজের চারপাশ ঘিরে এই ক্যালিগ্রাফি স্থাপনের দর্শনগত ধারণাও অত্যন্ত গুরুত্বের দাবি রাখে। কারণ এটা অসীমত্বের বোধ জাগ্রত করে। অর্থাৎ আল্ল¬াহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) যে অসীম, তা এই ক্যালিগ্রাফি দেখে অনুভব করা যায়। ইসলামী ক্যালিগ্রাফি বিভিন্ন মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়। কাগজে, পার্চমেন্টে, অর্থাৎ বই পুস্তক রচনায় শৈল্পিক ব্যবহার যেমন শুরু হয়, তেমনি স্থাপত্য ক্যালিগ্রাফির বিষয়টি মুসলিম শিল্পীদের একান্ত নিজস্ব উদ্ভাবন। এতে লিপির উপযোগিতা ও ব্যবহার তাদের সুচিন্তিত শৈল্পিক মানসের প্রকাশ ঘটিয়েছে। স্থাপত্যের কর্কশ ও শক্ত স্বভাবের জন্য কৌনিক ধারার লিপি যেমন কুফি লিপি এবং কুফি লিপির স্থানীয় প্রকার যেমন আন্দালুসী কুফির ব্যবহার শিল্পবোদ্ধাদের মুগ্ধ করেছে। উমাইয়া আমলের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের অন্যতম হচ্ছেন যাহহাক ইবনে আজলান ও ইউসুফ ইবনে হাম্মাদ। তাদের জীবনের ব্রত ছিল ক্যালিগ্রাফিকে শিল্পনৈপুণ্যের শীর্ষে নিয়ে যাওয়া। তারা ব্যবসায়িক লক্ষ্যে কখনও শিল্পকর্ম তৈরি করতেন না। এ জন্যই মাত্র হিজরী ৩য় শতকের শেষ দিকে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির গোটা প্রাসাদ পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে। কারণ সে সময় বিপুল সংখ্যায় পবিত্র কুরআনের অনুলিপি হয় এবং সেটাতে বিভিন্ন মাত্রায় শৈল্পিক নিপুণতা প্রয়োগ করা হয়। এতে করে লিখিত উপকরণাদির বেচাকেনা শুরু হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মের প্রতি প্রবল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। বাণিজ্যিকভাবে শিল্পকর্মের উপকরণাদি উৎপাদিত হতে থাকে। ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা প্রচলিত হয় এবং এ শিল্পকলাকে সুন্দর প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান বলে গণ্য করা হতে থাকে। ফলে সম্পূর্ণ নতুন একটি ক্ষেত্র অর্থাৎ গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ করা, পেশাজীবী, পেশাদার, সৌখিন শিল্পী, শিল্পকলার বিচারক এবং শিল্পকর্ম ও শিল্পে ব্যবহার্য উপকরণাদির বিক্রির জন্য বাজারের সৃষ্টি হয়।৩০ শিল্পকর্মের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্যালিগ্রাফি তৈরি শুরু হয়। সহজ মাধ্যম হিসেবে কাগজে, প্যাপিরাসে শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে ঝিল্ল¬ী ও চামড়ার ব্যবহার উঠে যায়। আব্বাসীয় যুগের (৭৫১-১২৫৮ খৃ.) প্রথমদিকেই পবিত্র কুরআনের জন্য কয়েকটি লিপি যেমন- নাসখী, রিকা, সুলুস, রায়হানী, মুহাক্কাক প্রভৃতি নির্দিষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপভাবে কুরআন বহির্ভূত বিভিন্ন বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক স্টাইলের লিপির ব্যবহারও প্রায় নির্দিষ্ট হয়ে যায়। বস্তুত বই-পুস্তক লেখার জন্য অধিকতর সুস্পষ্ট ও সহজ পঠনযোগ্য, বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোন থেকে মুক্ত ও সাংস্কৃতিক বিকাশের দাবি পূরণকারী এসব লিপির উদ্ভাবন ছিল অপরিহার্য। সহজ লিখনযোগ্য ও বিশেষ ব্যবহারের লক্ষ্যে উদ্ভাবিত এসব লিপি আলাদা আলাদাভাবে সরকারী দলিল-দস্তাবেজ, চিঠিপত্র, কেনাকাটার তালিকা, শ্রবণ থেকে অনুলিখন, এমনকি কবুতরের মাধ্যমে প্রেরণের চিঠির জন্য লেখা হতো। আব্বাসীয় আমলেই বাগদাদ ক্যালিগ্রাফি উৎপাদনের কারখানা স্বরূপ গড়ে উঠে। বাগদাদের এসময়কার ক্যালিগ্রাফি শিল্পের শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ সম্পর্কে ইয়াসির তাব্বা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। সত্যিকার চারুকলার বিষয় হিসেবে ক্যালিগ্রাফিকে (ক্লাসিক অর্থে) সুসংহত করেন রাজনীতিবিদ, কবি ও ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আবু আলী ইবনে মুকলা (মৃ. ৯৪০খৃ.) এবং তার ভাই ও ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মুকলা (মৃ. ৯৪৯ খৃ.)। তারা দু’ভাই ক্যালিগ্রাফিকে আনুপাতিক লেখনীতে বিন্যস্ত এবং একে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেন। যেটা ক্যালিগ্রাফির শিল্পমানকে উত্তরোত্তর শাণিত করে। ইবনে মুকলার ছাত্র আলী ইবনে হিলাল ইবনে বাওয়াব (মৃ. ১০২২ খৃ.) হচ্ছেন ইসলামের ইতিহাসে দর্শনীয় শিল্পকর্মের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী। একাধারে অভ্যন্তরীণ চিত্রকর (Interior Painter) ও ক্যালিগ্রাফির প্রতি অত্যন্ত একনিষ্ঠ হওয়ায় ইবনে বাওয়াব এ শিল্পকে শিল্পকলার শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এছাড়া ইয়াকুত আল মুস্তাসিমী (মৃ. ১২৯৮ খৃ.) ক্যালিগ্রাফির ট্রেডিশনাল ধারাকে সঠিক মাপে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ভবিষ্যত শিল্পকলায় লিভিং আর্ট হিসেবে একে স্থাপন করেন।যুগের পরিক্রমায় ইসলামী ক্যালিগ্রাফি পশ্চিমে মাগরিব বা মরক্কো থেকে পূর্বে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত একটি প্রভাব বিস্তারকারী শিল্পধারা হিসেবে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বিস্তার লাভের পর এতে নানামুখী স্টাইল ও ধারা যেমন জন্মলাভ করে তেমনি সাংস্কৃতিক বিকাশে স্থানীয় উপায়-উপকরণকে আত্মস্থের মাধ্যমে এটি বিস্ময়কর শিল্পে রূপলাভ করে। এ শিল্পের সংস্কার সাধনে প্রায় প্রতি শতাব্দীতে প্রয়াস চালাতে হয়েছে। ১৩৮০ খ্রীস্টাব্দে আনাতোলিয়ার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফির ওস্তাদ ও শিল্পী সেইহ্ হামদুল্ল¬াহ ক্যালিগ্রাফির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সাধনে ব্রতী হন এবং মাত্র দুই বছরে তিনি এর যাবতীয় খুঁটিনাটি বিন্যস্ত করেন এবং সাফল্যের সাথে একে পূর্ণতা দান করেন।
পাশ্চাত্য পেইন্টিংয়ের সাথে সমানতালে ক্যালিগ্রাফি তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এতে শুধু আরবরাই নয় বরং সমগ্র মুসলিম জাহাানের শিল্পীরা অবদান রেখেছেন। উনবিংশ শতাব্দীতে বিস্ময়কর সব ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম একে স্থায়ী মানদণ্ডে উপস্থাপন করে। এ সম্পর্কে তুর্কী গবেষক ও বিশেষজ্ঞ মাহমুদ ইয়াযীর অত্যন্ত চমৎকার মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “মুসলিম সম্প্রদায়ের ভেতর শুধু আরবরাই নয়। বরং তুর্কী, মিশরীয়, সিসিলীয়, তিউনেসীয়, আলজেরীয়, মরক্কান, আন্দালুসীয়, সুদানীয়, ইরানী, আফগান, মধ্য এশীয়, ভারতীয়, দক্ষিণ-পূর্ব ভারতীয়, জাভানীজ, লায, কুর্দি, বুলগেরিয় পোমাক মুসলমান, বসনীয়, আলবেনীয় এবং সের্কাসীয় নির্বিশেষে সকল মুসলিম জাতির লোকেরাই ক্যালিগ্রাফির অত্যাশ্চর্য শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন। এসব জাতি ছাড়া আরো বহু জাতির মধ্যে অনেক মহান ডিজাইন শিল্পী, পেইন্টার, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, দার্শনিক, কবি, সাহিত্যিক, বাদক, গায়ক, চিকিৎসক, ধর্মতাত্ত্বিক, পীর-মাশায়েখ, মুফতি, বিচারক, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মন্ত্রী, পাশা, পরামর্শক, জেনারেল, শাহ ও সম্রাটের উদ্ভব ঘটে, যারা তাঁদের ক্যালিগ্রাফির মাস্টার পিসের জন্য গোটা জীবন ব্যয় করেছেন এবং দৃষ্টিশক্তি ধ্বংস করেছেন এবং বলা যায় ওসমানীয় খেলাফতের পতন যুগেও ক্যালিগ্রাফির বিস্ময়কর অগ্রগতির নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক, বিশেষ করে ইস্তাম্বুল নগরীর মহান শিল্পীরা।”
একবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য শিল্প যখন ডিজিটাল মাধ্যমে আত্মস্থ হওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে, ক্যালিগ্রাফির ট্রেডিশনাল ও পেইন্টিং উভয় মাধ্যম তখন অনায়াসে স্বকীয়তা বজায় রেখে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং প্রযুুক্তির সর্বাধুনিক মাধ্যমকেও ক্যালিগ্রাফিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্রাফিক্স আর ডিজিটাল সাপোর্ট সাম্প্রতিক ক্যালিগ্রাফিতে ত্রিমাত্রিক ধারণাকে বাস্তবের অনুভূতি এনে দিয়েছে। ক্যালিগ্রাফির জ্যামিতিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ভারসাম্যের আঙ্গিকগত দিকটি বর্তমান সময়ের তথ্য প্রযুক্তির মাধমে সহজভাবে আমরা অনুভব করতে পারছি। যুক্তরাজ্যের আহমদ মুস্তফা, যুক্তরাষ্ট্রের মামুন শাক্কাল ও মুহাম্মদ জাকারিয়া, জাপানের ফুয়াদ কৌচি হোন্ডা যেমন আধুনিক শিল্পকলায় ইসলামী ক্যালিগ্রাফিকে পেইন্টিং ও ট্রেডিশনাল ধারায় শীর্ষে স্থাপনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ট্রেডিশনাল ধারায় একে বিশুদ্ধ ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়টি সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একবিংশ শতাব্দীর মাস্টার ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা। যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তুরস্কের হাচান চালাবি এবং ইরানের আমীর খানির মত ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফাররা। ক্যালিগ্রাফির ঐতিহ্যিক ব্যবহার ছাড়িয়ে একে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সৌন্দর্যের প্রতি অতি আগ্রহী শিল্পীরা। মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে বহু পাশ্চাত্যবাদী শিল্পী ক্যালিগ্রাফিকে উল্কি মাধ্যম, হেয়ার স্টাইল ও ফিগারেটিভ পেইন্টিংয়ে ব্যবহার করছেন। ফিগারেটিভ পেইন্টিং ছাড়াও জুমরফিক, এনথ্রোপগ্রাফি প্রভৃতি জীব আকৃতির ক্যালিগ্রাফিকে ’ক্যালিগ্রাম’ বলে চালানো হচ্ছে। পয়েন্টালিজমেরর মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্যালিগ্রাফিক হরফ ব্যবহার করে নির্বস্তক, অর্ধ নির্বস্তক এমনকি ফিগার আঁকা হচ্ছে। একে ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই বলি না কেন ইসলামী ক্যালিগ্রাফিকে একটি শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম বা শিল্পের ভাষা হিসেবে আধুনিক শিল্পীরা ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বাংলাদেশের ছাপচিত্র শিল্পীদের অন্যতম কালিদাস কর্মকার তার পেইন্টিংয়ে দক্ষতার সাথে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির মোটিফ ও বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মের অংশ বিশেষ সফলভাবে ব্যবহার করছেন। আরেক স্পেন প্রবাসী ছাপচিত্রী মনিরুল ইসলামও ক্যালিগ্রাফিকে তার পেইন্টিংয়ের অনুসঙ্গ করেছেন। মুর্তজা বশীরের কালিমা তৈয়্যবা প্রদর্শনীতে যে পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম আমরা দেখেছি বাংলাদেশের পেইন্টিং ধারায় সেটা একটি বড় ধরনের পাশ ফেরা বলা যায়। এছাড়াও সাইফুল ইসলাাম, ইব্রাহিম মন্ডল, আরিফুর রহমানসহ শতাধিক নবীন প্রবীণ শিল্পী ক্যালিগ্রাফি চর্চায় নিমগ্ন হয়েছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা সাহিত্য সাংস্কৃতি কেন্দ্র ও ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশের আয়োজিত ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীসমূহ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্যালিগ্রাফিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। ক্যালিগ্রাফি শেখার ব্যবস্থা হয়েছে, সহায়ক বই পত্র প্রকাশিত হয়েছে এবং নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীসমূহে ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন।
সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী ক্যালিগ্রাফিতে একটি প্রবল প্রবাহ আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা আমাদেরকে এ বিষয়ের প্রতিটি কর্মচাঞ্চল্য সম্পর্কে অবহিত করছে। প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বের কোথাও না কোথাও ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ, ক্রাফট ফেয়ার ,সেমিনার, প্রতিযোগিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সংস্কৃতি বিকাশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির এই অনায়াস বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমাদেরকে ক্যালিগ্রাফির মোহনীয় সৌন্দর্য যেমন আবিষ্ট করে, তেমনি সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
টিকা ও তথ্যসুত্র ঃ
১. Marshall Klarfeld, independent researcher and author of Adam: The Missing link, www.dailynexus.com/article/php% 3.... (Author Discusses a New History of Human Creation By Matt Cappoello, Staff writer, Published Monday November 21,2005, Issue 44/ Volume 86)
২. A timeline of Israel in Context with world Events Part I (Edited and amended by Jonathan Hirshon, Original Varsion by Dr. Shirley J. Rolllinson). (Internet, google Search).
৩. প্রাগুক্ত
৪. Sons of Noah. (Semitic, Internet, google search, http://en.wikipedia. org/wiki/semitic)
৫.Brief History of the Traditional Arabic Type. (1.1 The origin of the Arabic Script., Internet, google search.)
৬. প্রাগুক্ত
৭. The Cultural Atlas of Islam. by Ismail R. Al Faruqi and Lois Lamya Al Faruqi, Macmillan publishing Company. New York. 1986, pp-20-42
৮. পবিত্র কুরআন. (সূরা - ১৬ : আয়াত - ১০৩, ২৬ : ১৯৫, ১২ : ২, ১৩ : ৩৭, ২০ : ১১৩, ৩৯ : ২৮, ৪১ : ৩, ৪২ : ৭, ৪৩ : ৩, ৪৬ : ১২)।
৯. মধ্যযুগের ইউরোপ ও সমস্ত এশীয়কে শামের বংশধর (সেমেটিক) ধরা হত। কিন্তু ১৯ শতকে সেমেটিক শব্দটি ঐতিহাসিকভাবে সেমেটিক ভাষাভাষীদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নিকট প্রাচ্যের জনগোষ্ঠী যেমন- আরব, সিরিয়ান ও ইহুদীদেরকে সেমেটিকরূপে চিহ্নিত করা হয়। (Internet, Google search, http://en.wikipedia.org/wiki/semitic)
১০. প্রাগুক্ত
১১. The Graphic Arts. Marshall Cavendish Book limited, 58 old Comption street, London, WI, 1970. P-5
১২. Qadi Ahmad, Gulistan-i-Hunr, Eng. Trans. entitled, Calligraphers and Painters, T. Minorsky (Washington: Freer Gallery of Art, 1959) P-52..
১৩. Al. Qasd Wa Al-Umam, P-17
১৪. Abul Fadl `Allami, Ain-i-Akbari. Vol. I tr. H. Blochmann (Calcutta : Asiatic Society of Bengal. 1873) P-99
১৫. কিবতী - প্রাচীন মিশরের কপটিক খ্রীস্টান সম্প্রদায়,(Dubai International Exhibition of The Arabic Calligraphy Art. The Arabic Calligraphy ... record of a nation by Muhammad Abdu Rabah U' lan. P-49)
১৬. তিন লাইনের এই প্রস্তর ফলকের প্রথম ছত্রে লেখা আছে।এক. দানাহ নাফসু ফিহরু অর্থাৎ এটা একটা ফিহরের সমাধি,দুই. বিরসলি রবউ যাজিমাহ অর্থাৎ জাজিমাহ মুরবিব রসলিরতিন. মালিক তানুখ অর্থাৎ মালিক তানুখ উপাধি ধারী সালি মুরবিব জাজিমার পুত্র ফিহর।জর্ডানের হাওরান নামক স্থানের দক্ষিণে এই সমাধিফলকটি পাওয়া যায়। (কামিল সালমান আল জাবুরী, মুসেআহ আল খত আল আরাবি, আল খত আল কুফী, দারু মাকতাবাহ আল হিলাল, বইরুত, লেবানন, ১৯৯৯, পৃ-৩১)
১৭. প্রাগুক্ত. পৃ-৩২
১৮. প্রাগুক্ত. পৃ-৩৩
১৯. প্রাগুক্ত. পৃ-৩৫
২০. Arabic Alphabet, Pronunciation and language, (http : // www.omniglot.com/writing/arabic.htm)
২১. রাসূল (সাঃ) বাহরাইনের শাসক মুনযির বিন সাবির নিকট ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত একটি পত্র প্রেরণ করেন। পত্রটির বাহক ছিলেন সাহাবী আলা বিন হাদরামী। পত্রের নীচে রাসূলের মোহরের ছাপ রয়েছে। উলে¬খ্য, রাসূলের নির্দেশে এই স্টাইলে মোহর খোদাইকারী মোহরটি তৈরী করেন। কুফি মাসক লিপি, কোন কোন গবেষক প্রাচীন নাশখী লিপি বলেছেন এই মোহরের লিপিকে।(Dubai International Exhibition (4th Session 2007) Arabic Calligraphy Art. P-53)
২২. এদেরকে ওহির লেখক বলা হয়। এরা হলেন, ১. আসআদ বিন যারারাহ, ২. আবু আবস বিন জাবর, ৩. উসাইদ বিন হুদাইর, ৪. আওস বিন খাওলি, ৫. বাশির বিন সাদ, ৬. জাহিম বিন সালত, ৭. রাফে বিন মালেক, ৮, যায়েদ বিন আরকাম, ৯. যায়েদ বিন সাবিত, ১০. সাদ বিন রবি’, ১৪. আবদুল্ল¬াহ বিন আমর ইবনুল আস, ১৫. মাআন বিন আদি। এছাড়া আরো অনেকে কুরআনের লেখক ছিলেন। রাসূল (সাঃ)-এর এই কাতেবদের সংখ্যা ৪২ জনে উন্নীত হয়েছিল। যাদের মধ্যে উল্লে¬খযোগ্য হচ্ছেন, উবাই ইবনে কাব। (আহমদ সাবরি যায়েদ, তারিখ আল খত আল আরাবী ওয়া আ’ল্লাম আল খাত্তাতীন, দার আল ফাদিলাহ, কায়রো, মিশর ১৯৯৯ পৃ-১১-৩৭)
২৩. তফসীর মাআরেফুল কুরআন (পবিত্র কুরআনুল করীম, হযরত মওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী (রহঃ) অনুবাদ ও সম্পাদনা : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, খাদেমুল হারামইন বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রকল্প, মদীনা মোনাওয়ারা, ১৪১৩ হিঃ পৃ-১৫৮) সূরা-২ আয়াত-২৮২।
২৪. এটা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পূর্ব থেকে লেখা তাওরাতের পাতা বা তখতী হযরত মূসা (আঃ) কে অর্পণ করা হয়েছিল। আর সে তখতীগুলোর নামই হলো ‘তওরাত’। সূরা-৭, আয়াত-১৪৫, প্রাগুক্ত, পৃ-৪৮২। এছাড়া সূরা-২ আয়াত - ১০৫ বলা হয়েছে, আমি উপদেশের পর যাবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্ম পরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে। এ আয়াতের মাধ্যমেও বুঝা যায় যাবুর লিখিত ছিল। প্রাগুক্ত পৃ- ৮৯১-৮৯২।
২৫. সালমান আল জাবুরী, প্রাগুক্ত পৃ-২০, রওয়াহু আল তিবরানী ফি আল কাবীর ওয়া গয়রাহ।
২৬. প্রাগুক্ত, পৃ-২০, রওয়াহু ইবনে নাজ্জার।
২৭. প্রাগুক্ত পৃ-২০, রওয়াহু আল দায়লামী ফি মুসনাদ আল ফিরদাউস।
২৮. Histry of Islamic Calligraphy. by m Zaqani, Mahjubah. January 2006, Iran.
২৯. Arabic Calligraphy in Manuscripts. King Faisal Centre Research and Islamic Studies PP-30-50
৩০. M. Zaquani- প্রাগুক্ত
- মোহাম্মদ আবদুর রহীম : গবেষক, শিল্পী, গ্রন্থকার ও সেক্রেটারি, ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ, প্রশিক্ষক, ক্যালিগ্রাফির শৈলী বিষয়ক কোর্স।
Wednesday, February 10, 2010
ক্যালিগ্রাফির সাথে আমার পথচলা
মানব মনের গভীরে সৌন্দর্য বোধের প্রতি যে তিয়াস, তা মেটায় লিপিকলা। সুস্থ, নির্মল, আনন্দদায়ক এবং জীবনকে যথার্থ নৈতিক মানে উন্নীত করতে লিপিকলা, বিশেষ করে যে ক্যালিগ্রাফি ইসলামের সাথে সম্পর্কিত তার গুরুত্ব অপরিসীম। এক অর্থে আরবি লিপির ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য ও গ্রহণযোগ্যতা অতুলনীয়। ব্যক্তিগতভাবে শৈশবে মক্তবে কলকাতা ছাপা ও লৌখনু ছাপা কুরআন দেখে আরবী হরফের গঠন ও আকৃতিগত বৈচিত্র সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে। পারিবারিকভাবে লৌখনু ছাপার কুরআনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পায়। মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে সৌদী আরব থেকে সনদ প্রাপ্ত ওস্তাদের কাছে ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক হরফের সাথে পরিচয় ঘটে। সহজাত আগ্রহ ও ওস্তাদদের অনুপ্রেরনায় নাসখ, সুলুস, দিওয়ানী লিপি শৈলীর প্রতি গভীর ভালবাসা গড়ে ওঠে। ৭ম শ্রেনীতে পড়ার সময়ই খুলনা আলিয়া মাদ্রাসার প্যাডের আরবী শিরোনাম, মাদ্রাসার যাবতীয় সাইনবোর্ড, ব্যানার আরবী লিপিতে লেখার জন্য ওস্তাদগণের দোয়া পেয়েছি। ৮০ দশকে বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শেখার কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না বিধায় ব্যক্তিগতভাবে ক্যালিগ্রাফি শিখেছি সৌদি আরব থেকে সনদপ্রাপ্ত ওস্তাদগণের কাছে এবং ঢাকায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার সময় ওস্তাদ শহীদুল্লাহ এফ. বারী, যিনি বাংলাদেশে একমাত্র সৌদি আরব থেকে শৈলী বিষয়ক সনদপ্রাপ্ত, তাঁর কাছে পূর্ণভাবে শৈলীগুলো হাতেকলমে রপ্ত করি। এভাবেই ক্যালিগ্রাফির সাথে আমার পথ চলা শুরু হয়। নাস্তালিক ও শিকাস্তে নাস্তালিক শৈলী ইরানের ওস্তাদ মাহবুবে পুররহীমী মাশহাদী, ওস্তাদ আলী ফারাসাতী, ওস্তাদ সিদাঘাত জাব্বারীর নিকট থেকে শিখেছি। এর সাথে সাথে এ শিল্প নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রয়োগ ও প্রকরণে বহুরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছি। পাশাপাশি, ক্যালিগ্রাফির দর্শন, বৈশিষ্ট্য, নান্দনিকতা, ব্যাকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের জন্য ব্যক্তিগতভাবে যথাসাধ্য গভীর অধ্যয়ন অব্যাহত রেখেছি। পর্যায়ক্রমে এর সাথে আমার একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আমি যে ধারণা লাভ করেছি তাতে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বহু নিবন্ধ-প্রবন্ধ প্রকাশনার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং কয়েকটি বই প্রকাশ করেছি।
ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম :
এক হাজারের অধিক (সঠিক হিসাব রাখা হয়নি) ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম করা হয়েছে। সুলুস, নাশখ, দিওয়ানী, তালিক, ফারেসী, ইযাযা, কারামাতিয়ান কুফি, ইস্টার্ন কুফি, মাগরেবী কুফি, আন্দালুসিয়ান কুফি, বিহারী, বেঙ্গল তুগরা (নাশখ, সুলুস), রায়হানী, মুহাক্কাক, জালী সুলুস, জালী দিওয়ানী, নাস্তালিক শৈলীসহ ফ্রি হ্যান্ড ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং।
শিল্পকর্মের মাধ্যম:
পেইন্টিংয়ে- তেল রং, পানি রং, মিশ্রমাধ্যম, বিশেষ করে সোনালী-রূপালী মেটাল কালারের প্রয়োগ, এ্যাক্রিলিক, ফেব্রিক ও পার্ল কালার।
ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ :
আইআরসিআইসিএ’র ৭ম আন্তর্জাতিক আরবি ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীসহ ২৫টি দেশী-বিদেশী প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ।
ফ্রেস্কো বা মুরাল ক্যালিগ্রাফি :
যেটা মসজিদ ও ধর্মীয় ইমারতে করা হয়েছে, সেখানে টাইলস, টেরাকোটা, গ্লেজ ফায়ারিং সিরামিকের ব্যবহার, মার্বেল পাথরে এনগ্রেভ, কাঠে এনগ্রেভ, পটারীতে-কাটাই, খোদাই, ম্যাট ফায়ারিং, গ্লেজ ফায়ারিংয়ে সিরামিক কাজ রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য মসজিদে কাজ- সলগোলা জামে মসজিদ, ৪ নং জেটি গেট, পতেঙ্গা সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম (২০০০ খৃ.); ডিওএইচএস জামে মসজিদ, বারিধারা, ঢাকা (২০০২ খৃ.); সুন্ধিসার জামে মসজিদ, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ (২০০৩ খৃ.); সেনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঢাকা সেনানীবাস (২০০৫ খৃ.); মসজিদ আল মাগফেরাহ, কবি নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ৫ নং সেক্টর, উত্তরা, ঢাকা (২০০৬ খৃ.)। এছাড়া ২০০৮ সালে দরগাহ্-এ হযরত শাহ্ সোলেমান ফতেহ্ গাজী (রহঃ) বাগদাদী, শাহজিবাজার, ফতেহপুর, মাধবপুর, হবিগঞ্জ ক্যালিগ্রাফি করা হয়।
এ্যাওয়ার্ড :
২০০৯ সালে ইরানে বিসমিল্লাহ ক্যালিগ্রাফি লোগো এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ
জুরি বোর্ডের সদস্য:
২০০৯ সালে ইরানে বিসমিল্লাহ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর অন্যতম জুরি হিসেবে অংশগ্রহণ
ক্যালিগ্রাফি সংগঠন :
দেশে প্রথম ক্যালিগ্রাফি সংগঠন ‘বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি’র (১৯৯৭ খৃ.) প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন।
ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ ক্লাস :
সোসাইটির অন্যতম প্রশিক্ষক হিসেবে ট্রেডিশনাল ফন্ট- সুলুস, নাসখ, দিওয়ানি, তালিক, কুফি, মুয়াল্লা প্রভৃতিতে প্রশিক্ষণ প্রদান।
ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম সংগ্রহ :
দেশের ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ, বিদেশে-ভারত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক ও ইরান।
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক ওয়েব সাইট :
বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক প্রথম ওয়েব সাইট এবং ওয়েব পোর্টাল নির্মাণ। সাইট দুটি হচ্ছে- http://www.bdcalligraphy.com/ http://bdcalligraphy.blogspot.com/ এছাড়া ব্যক্তিগত ওয়েব সাইটগুলো হচ্ছে-http://rahimcalligraphybd.wordpress.com, http://www.rahimcalligraphybd.blogspot.com/
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক ডকুমেন্টরী নির্মাণ :
দেশে ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক প্রথম ডকুমেন্টরী নির্মাণ ও সাটেলাইট চ্যানেলে প্রচার (২০০৮ খৃ.)
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক আর্কাইভ :
ক্যালিগ্রাফির গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তাকল্পে আর্কাইভ গড়ে তোলার কাজ অনেক দূর এগিয়ে নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত শতাধিক গ্রন্থ, ক্যাটালগ, পত্র-পত্রিকা, ডকুমেন্ট, ক্যালিগ্রাফি নমুনা ও কয়েক’শ আর্টিকেল সংগ্রহ করা হয়েছে।
ক্যালিগ্রাফির আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন :
বিদেশে সমকালিন ক্যালিগ্রাফি তৎপরতা ও কার্যক্রম সম্মন্ধে ধারণালাভ ও সংগঠনগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। বিশেষভাবে ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর সাংস্কৃতিক বিভাগ IRCICA’র ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা ও ক্যালিগ্রাফি উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ। IRCICA’র ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক কার্যক্রমের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন।
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক ওয়ার্কশপ :
দেশী-বিদেশী কয়েকটি ওয়ার্কশপে পার্টিসিপেন্ট ও ডেমন্সট্রেটর হিসেবে অংশগ্রহণ।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
১. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি
প্রকাশক- যোগাযোগ পাবলিশার্স৩৪ নর্থব্র“ক হলরোড, ৩য় তলা বাংলাবাজার, ঢাকাপ্রথম প্রকাশ ঃ অক্টোবর -২০০২দ্বিতীয় প্রকশ ঃ এপ্রিল - ২০০৫
২. সহজ সুন্দর আরবী ক্যালিগ্রাফি নাসখী লিপি
প্রকাশক - ঝিঙেফুল, বাংলাবাজার, ঢাকাপ্রথম প্রকাশ একুশে বই মেলা -২০০৫
৩. হাতে কলমে আরবী ক্যালিগ্রাফিসুলুস. নাশখ ও দিওয়ানী লিপি শৈলী(যৌথনামে)
প্রকাশক-দারুল আরকাম পাবলিকেশনঢাকা, প্রকাশকাল-২০০৪।
৪. আল খত আল সুলুস
প্রকাশক- ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন, মগবাজার, ঢাকাপ্রকাশকাল-২০০৯
৫. খত আল মুআল্লা
প্রকাশক- ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন, মগবাজার, ঢাকাপ্রকাশকাল-২০০৯
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক প্রকাশিত প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদন তালিকা :
০১. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি: উৎস ও সাংস্কৃতিক বিকাশ- দৈনিক সংগ্রাম- ০৪/০৪/১৯৯৭
০২. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি: উৎস ও সাংস্কৃতিক বিকাশ- সোনার বাংলা- ২৬/০৪/১৯৯৭
০৩. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি: উৎস ও সাংস্কৃতিক বিকাশ- শিকড় (ম্যাগাজিন) জুলাই-১৯৯৭
০৪. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি: উৎস ও সাংস্কৃতিক বিকাশ- প্রেক্ষন (ম্যাগাজিন) মার্চ-১৯৯৮
০৫. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে কুফী লিপি- দৈনিক বাংলাবাজার- ১৮/০৭/১৯৯৭
০৬. আরবি ক্যালিগ্রাফি: ইসলামী ক্যালিগ্রাফি- দৈনিক সংগ্রাম- ০১/০৮/১৯৯৭
০৭. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে বাসমালাহ: সাংস্কৃতিক প্রভাব ও প্রেক্ষিত- সোনার বাংলা- ০৫/১২/১৯৯৭
০৮. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে থুলুথ লিপি- বাংলাবাজার- ০৩/০৪/১৯৯৮
০৯. কাশ্মীরের ক্যালিগ্রাফার ও ক্যালিগ্রাফি- বাংলাবাজার- ১৭/০৪/১৯৯৮
১০. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি প্রাথমিক পর্যায়- বাংলাবাজার- ১৯/০৬/১৯৯৮
১১. ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে মাগরিবী লিপি- বাংলাবাজার- ১০/০৭/১৯৯৮
১২. ক্যালিগ্রাফি শিল্পের প্রভাবেই বিমূর্ত শিল্পের উৎপত্তি- বাংলাবাজার- ২৪/০৭/১৯৯৮
১৩. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: আল আকলাম আল সিত্তাহ- অগ্রপথিক- অক্টোবর-১৯৯৯
১৪. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে রং ও হরফ বিন্যাস- অগ্রপথিক-নভেম্বর-১৯৯৯
১৫. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: ক্যালিগ্রাফির দুই জনক- অগ্রপথিক- ডিসেম্বর-১৯৯৯
১৬. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: কুফী লিপি- অগ্রপথিক- আগষ্ট-২০০০
১৭. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: থুলুথ লিপি- অগ্রপথিক- সেপ্টেম্বর-২০০০
১৮. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: মাগরিবী লিপি- অগ্রপথিক- অক্টোবর-২০০০
১৯. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: শেকড় সন্ধানে- অগ্রপথিক- নভেম্বর-২০০০
২০. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: কাশ্মীরের ক্যালিগ্রাফার ও ক্যালিগ্রাফি- অগ্রপথিক- ডিসেম্বর-২০০০
২১. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: বাসমালাহ- অগ্রপথিক- জানুয়ারী-২০০১
২২. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: উৎস ও সাংস্কৃতিক বিকাশ- অগ্রপথিক- ফেব্র“য়ারী-২০০১
২৩. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: আরবি হরফের ক্যালিগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য- অগ্রপথিক- মার্চ-২০০১
২৪. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: গোড়ার কথা- অগ্রপথিক- ডিসেম্বর-২০০১
২৫. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: টেকনিক ও পরিভাষা- অগ্রপথিক- জানুয়ারী-২০০২
২৬. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: তাশকীল - অগ্রপথিক- মার্চ-২০০২
২৭. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: যন্ত্রপাতি ও উপাদান- অগ্রপথিক- এপ্রিল-২০০২
২৮. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি যুগে যুগে: স্থাপত্যে ক্যালিগ্রাফি- অগ্রপথিক- জুন-২০০২
২৯. শিল্পী আরিফুর রহমানের ক্যালিগ্রাফি- দৈনিক সংগ্রাম- ২৮/০৬/২০০২
৩০. ২৪ শিল্পীর ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী: বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পের উত্থান-দৈনিক সংগ্রাম-১৯/০৭/২০০২
৩১. শিলালিপি ও মুদ্রায় ক্যালিগ্রাফি- অগ্রপথিক- আগষ্ট-২০০২
৩২. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ- সীরাত স্মারক, ঢাসাস-২০০১
৩৩. শিল্পী মুর্তজা বশীর, তুলিতে যার সত্য উজ্জল উদ্ভাসিত- দৈনিক সংগ্রাম- ১০/০৫/২০০২
৩৪. বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পের উত্থান- সীরাত স্মারক, ঢাসাস- ২০০২
৩৫. বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি চর্চা- বাংলাবাজার- ১১/১০/২০০২
৩৬. বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পের উত্থান- বাংলাবাজার- ২৫/১০/২০০২
৩৭. ক্যালিগ্রাফি কালেমা তৈয়্যবা: মুর্তজা বশীরের বর্ণালী তুলিতে আধ্যাত্ম আরাধনা-সংগ্রাম০৮/১১/২০০২
৩৮. কালেমা তৈয়্যবা মুর্তজা বশীরের ক্যানভাসে- দৈনিক যুগন্তর- ০৮/১১/২০০২
৩৯. ক্যালিগ্রাফির বিস্ময় ঘুবার লিপি- অগ্রপথিক- এপ্রিল- ২০০৩
৪০. শিল্পী কামরুল হাসান কালন: শিল্পকর্মে যার বিশ্বাসে: প্রতিধ্বণি- সংগ্রাম- ১৮/০৪/২০০৩
৪১. অন্তর্লোকের সন্ধানে কালিদাস- যুগান্তর- ০৬/০৬/২০০৩
৪২. শিল্পী সামসুল ইসলাম নিজামী: একজন বিশ্বাসী শিল্পসাধক- দৈনিক সংগ্রাম- ২০/০৬/২০০৩
৪৩. ক্যালিগ্রাফি আঁকা সলগোলা মসজিদ- যুগান্তর- ৩০/০৬/২০০৩
৪৪. ক্যালিগ্রাফ আর্ট- ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ- আগষ্ট- ২০০৩
৪৫. শাহজাদা দারাশিকোর ক্যালিগ্রাফি (অনুবাদ) - অগ্রপথিক- আগস্ট- ২০০৩
৪৬. রাসুলুললাহ (সঃ) এর সময়ে ক্যালিগ্রাফি- দৈনিক সংগ্রাম- ০৬/০৬/২০০৩
৪৭. ক্যালিগ্রাফি শিল্পে কবি ও কবিতা- দৈনিক সংগ্রাম- ৩০/০৪/২০০৪
৪৮. বাংলাদেশের কোরআনিক কালচারের প্রতিভূ ইসলামি ক্যালিগ্রাফি- সংগ্রাম- ০৪/০৬/২০০৪
৪৯. শৈলী ও নান্দনিকতায় সিক্ত ৭ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৪ - সংগ্রাম- ১৩/০৬/২০০৪
৫০. আরবী ক্যালিগ্রাফিকে নাসখী লিপি- সংগ্রাম- ১৮/০৬/২০০৪
৫১. নান্দনিকতার নব আলেখ্য বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি- বাংলাবাজার- ১১/০৬/২০০৪
৫২. বাংলাদেশে কোরআনিক কালচারের প্রতিভূ ইসলামী ক্যালিগ্রাফি- সোনার বাংলা- ২৫/০৬/২০০৪
৫৩. ইসলামি ক্যালিগ্রাফি: কোরআন চর্চার আরেক দিগন্ত- বাংলাবাজার- ০৪/০৬/২০০৪
৫৪. আরবী ক্যালিগ্রাফিতে নাসখ লিপিকলা- বাংলাবাজার- ১৮/০৬/২০০৪
৫৫. বাংলাদেশের ইসলামী ক্যালিগ্রাফি- বাংলাবাজার- ০৯/০৭/২০০৪
৫৬. ক্যালিগ্রাফি শিল্পে কবি ও কবিতা- বাংলাবাজার- ৩০/০৭/২০০৪
৫৭. ক্যালিগ্রাফির মজা- সংগ্রাম- ০১/১১/২০০৪
৫৮. ক্যালিগ্রাফি শেখার মজা- সংগ্রাম- ২৯/১১/২০০৪
৫৯. বাংলা ক্যালিগ্রাফি: ঐতিহ্য ও শিল্পবোধের পথে যাত্রা- সংগ্রাম- ১৩/০৩/২০০৫
৬০. ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে মিস্ট্রিক্যাল ফর্ম- সংগ্রাম- ০৮/০৪/২০০৫
৬১. শিল্প আধ্যাত্মিকতার পথে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি- নয়া দিগন্ত- ০৭/০৬/২০০৫
৬২. সমকালীন শিল্পকলায় ইসলামী ক্যালিগ্রাফি লিভিং আর্টফরম- সংগ্রাম- ০৮/০৭/২০০৫
৬৩. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি: শিল্প আধ্যাত্মিকতার সেতুবন্ধন- কলম- ফেব্র“য়ারী ও অক্টোবর- ২০০৫
৬৪. সমকালীন ইসলামী ক্যালিগ্রাফি- সংগ্রাম- ১৪/১০/২০০৫
৬৫. ইলাহে খাতামী আধুনিক ক্যালিগ্রাফিতে ইরানী মহিলাক্যালিগ্রাফার- সংগ্রাম- ০১/০১/২০০৬
৬৬. দুবাইয়ের ৩য় আন্তর্জাতিক আরবী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী-২০০৬ শিল্পাঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে- সংগ্রাম- ০৫/০৪/২০০৬
৬৭. ক্যালিগ্রাফির কথা- সোনারবাংলা- ১৭/০৩/২০০৬
৬৮. সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি- বাংলাবাজার- ২৬/০৫/২০০৬
৬৯. বাংলা ক্যালিগ্রাফি: সম্ভাব্যতা ও চলমান ধারা- সংগ্রাম- ০৯/০৫/১৯৯৭
৭০. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি (গ্রন্থ), অক্টোবর- ২০০২ - যোগাযোগ পাবলিশার্স
৭১. সহজ সুন্দর আরবী ক্যালিগ্রাফি নাশখী লিপি (২০০৫)- (গ্রন্থ) - ঝিঙে ফুল- বইমেলা- ২০০৫
৭২. হাতে কলমে আরবী ক্যালিগ্রাফি সুলস, নাশখ, দিওয়ানী লিপিশৈলী- দারুল আরকাম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, অক্টোবর, ২০০৪
৭৩. ক্যালিগ্রাফ আর্ট পত্রিকার আলোচনা- সংগ্রাম- ২৩/০৪/২০০৪
৭৪. সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনে জাপানের আরবী ক্যালিগ্রাফি শিল্পী- সংগ্রাম- ১৪/০৬/২০০৬
৭৫. শিল্পী ইব্রাহীম মন্ডলের ক্যালিগ্রাফি ভাবনা- বাংলাবাজার- ২৩/০৬/২০০৬
৭৬. ক্যালিগ্রাফি: বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প- বাংলাবাজার- ৩০/০৬/২০০৬
৭৭. ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফিতে বাংলাদেশ- সংগ্রাম- ১৪/০৭/২০০৬
৭৮. ক্যালিগ্রাফির হরফ- সোনারবাংলা- ২১/০৭/২০০৬
৭৯. একজন বটবৃক্ষ, ক্যালিগ্রাফ আর্ট- আগস্ট- ২০০৩
৮০. ইসলামী ক্যালিগ্রাফিতে “মুহাম্মদ (সঃ)” শব্দের নান্দনিক উপস্থাপন- সংগ্রাম- ২৬/০৭/২০০৬
৮১. ভারতে সাম্প্রতিক ক্যালিগ্রাফি চর্চা- সংগ্রাম- ০৮/০৯/২০০৬
৮২. আর্ন্তজাতিক ক্যালিগ্রাফি কনটেস্ট ও আমেরিকায় সাম্প্রতিক ক্যালিগ্রাফি চর্চা- সংগ্রাম- ১৮/১০/২০০৬
৮৩. তুরস্কের সাম্প্রতিক ক্যালিগ্রাফি চর্চা -সংগ্রাম- ১০/১১/২০০৬
৮৪. আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী বিষয়ক কথকতা- সংগ্রাম- ১৫/১১/২০০৬
৮৫. বিশ্বাসী মায়েদের হাতের ক্যালিগ্রাফি কুরআন- সংগ্রাম- ০৮/১২/২০০৬
৮৬. ক্যালিগ্রাফির নন্দনতত্ত্ব প্রেক্ষিত বাংলাদেশ- সংগ্রাম- ০৭/০২/২০০৭
৮৭. আরবী ক্যালিগ্রাফির প্রকার ও প্রকরণ- সোনার বাংলা- ১৬/০২/২০০৭
৮৮. আধ্যাত্মিক শিল্প ক্যালিগ্রাফি- ইত্তেফাক- ১৬/০২/২০০৭
৮৯. দুবাই ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফির ৪র্থ জমজমাট প্রদর্শনী- সংগ্রাম- ৪/৪/২০০৭
৯০. সাম্প্রতিক শিল্পভাবনা- সংগ্রাম- ১৮/৪/২০০৭
৯১. আরবী ক্যালিগ্রাফি : নিঃশব্দ সঙ্গীতের স্রোতধারা- সংগ্রাম- ১১/৭/২০০৭
৯২. ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শৈল্পিক- সাংস্কৃতিক বিকাশ- সংগ্রাম ঈদ সংখ্যা-২০০৭ (১০ অক্টোবর ২০০৭)
৯৩. ইন্টারনেটে ক্যালিগ্রাফি- সংগ্রাম- ২১/৫/২০০৮
৯৪. সাম্প্রতিক লিপিশৈলীতে বিস্ময়কর আবিস্কার : মুয়াল্লা ক্যালিগ্রাফি- সংগ্রাম- ৪/৬/২০০৮
৯৫. ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী- সংগ্রাম- ২৭/৬/২০০৮
৯৬. বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ- সংগ্রাম ঈদ সংখ্যা-২০০৮ ( অক্টোবর ২০০৮)
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা :
বাংলাদেশের প্রথম ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ
ক্যালিগ্রাফ আর্ট
সম্পাদক- মোহাম্মদ আবদুর রহীম
প্রথম প্রকাশ - আগস্ট - ২০০৩
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক গ্রন্থ সম্পাদনা :
গবেষক মুহাম্মদ নূরুর রহমান ২০০৫ সালে “আরবী ক্যালিগ্রাফীর উদ্ভব ও বিকাশ : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ” শিরোনামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। তার অভিসন্দর্ভটি ২০০৯ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়।
ক্যালিগ্রাফি উন্নয়নে সমস্যা ও বাধাসমূহ :
বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ জনগন মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আরবী ভাষা ও হরফের সাথে পরিচয় বিশেষ করে শৈল্পিক গুনাগুন বোঝার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে আরবী ক্যালিগ্রাফিকে অধিকাংশ শিল্পীর শুধু ধর্মীয় ব্যাপার মনে করা এবং ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় চাপে পড়ে এর থেকে দূরে থাকা। কোন প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে না ওঠা। শৈলী বিষয়েও ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের মাঝে সঠিক গুরুত্ব ও চর্চা না হওয়া (মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন ছাড়া)। চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে সিলেবাসে গুরুত্বহীন করে রাখা, এ বিষয়ে শিক্ষক না থাকা, সর্বোপরি বিষয়টি সম্পর্কে শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য যতটুকু ভাসাভাসা জ্ঞান দরকার ততটুকু স্থান পাওয়া। আধুনিক ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্পী সবার মাঝে কমবেশী অজ্ঞাত থাকা। ক্যালিগ্রাফি আন্দোলন হিসেবে ব্যাপকভাবে এগিয়ে না আসা (মুষ্টিমেয় কয়েকটি সংগঠন ছাড়া, তাদের মধ্যেও অনৈক্যের ভাব প্রবল), উদারভাবে, আত্মনিবেদিত ক্যালিগ্রাফারদের বড় একটা দল গড়ে না ওঠা (গড়ে ওঠতে শুরু করেছে), বড় সড় ক্যালিগ্রাফির আর্কাইভ না থাকা (ব্যক্তিগত ভাবে ও দু’একটি সংগঠন আর্কাইভ গড়ে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছে), সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা। ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মের স্থায়ী গ্যালারী না থাকা। এছাড়া শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির জন্য সঠিক যন্ত্রপাতি, উপায়, উপকরন প্রভৃতির দু®প্রাপ্যতা।
ক্যালিগ্রাফি উন্নয়নে সম্ভাবনা :
ফিগারেটিভ আর্টের স্থুল আবেদনের বিপরীতে স্পিরিচুয়াল জিওমেট্রি অর্থাৎ আধ্যাত্মিক রেখা অংকন হিসেবে ক্যালিগ্রাফির সম্ভাবনা বিশাল। দেশে ধর্মপ্রান মুসলমানদের কাছে শিল্পের পিপাসা মেটানোর জন্য ক্যালিগ্রাফি ছাড়া কোন বিকল্প নেই। একজন শিল্পী তার জীবিকা, সম্মান, মর্যাদা, সমাজে প্রতিষ্ঠা ও পরকালীন মুক্তির উপায় হিসেবে ক্যালিগ্রাফি চর্চাকে নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন। বর্তমানে এদেশে প্রিন্টিং ক্ষেত্রে ক্যালেন্ডার, বইয়ের প্রচ্ছদ, উৎসবাদির কার্ডসহ নানা মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি একটি গ্রহনীয় ও পূণ্যময় বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শিল্পকর্মের নতুন ও স্বতন্ত্র ধারা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও চর্চার মাধ্যমে এটা অব্যাহত রাখতে পারলে আরবী ক্যালিগ্রাফির সুফল সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। এর কল্যানময় প্রভাব শিল্পাঙ্গনকে সুস্থ ও শান্তিময় পরিবেশ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সমাজ আলোকিত ও শান্তিময় হয়ে উঠবে।
ক্যালিগ্রাফির উন্নয়নে প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা :
১. প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গঠনে মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সিলেবাস ভূক্ত করা।
২. এজন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষন দিয়ে শিক্ষক তৈরী করা।৩. দ্বিবার্ষিক, জাতীয়ভাবে ক্যালিগ্রাফির প্রদর্শনী করা, বিদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের প্রদর্শনী করার ব্যবস্থা গ্রহন করা।
৪. সেমিনার, ওয়ার্কশপ, বিশেষ প্রশিক্ষন কোর্স চালু করা।
৫. ক্যালিগ্রাফির একটি স্থায়ী গ্যালারী স্থাপন করা।
৬. আধুনিক ক্যালিগ্রাফি (বাংলাদেশের) নিয়ে একটি জাতীয় এ্যালবাম করা।
৭. শিল্পকলা একাডেমীর চারুকলা বিভাগে ক্যালিগ্রাফির আলাদা সেকশন খোলা।
৮. চারুকলা ইনষ্টিটিউটে ক্যালিগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট খোলা।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আলাদা বিভাগ খোলা।
১০. ক্যালিগ্রাফির একটি জাতীয় আর্কাইভ স্থাপন করা।
১১. শিশু একাডেমীতে ক্যালিগ্রাফির জন্য আলাদা বিভাগ খোলা।
১২. বিদেশের বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায়/প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহনের ব্যবস্থা গ্রহন করা।
১৩. ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা।
সংক্ষিপ্ত ব্যক্তিগত তথ্য :
মোহাম্মদ আবদুর রহীম
পিতা- মোহাম্মদ আবদুর রশীদ
মাতা- বেগম রোকেয়া রশীদ (মরহুমা)
জন্ম- টুটপাড়া, খুলনা। ৫ মার্চ, ১৯৭৪ (সার্টিফিকেট অনুযায়ী)। আসল ১৯৬৮।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- এম.এম (কামিল হাদিস) ১৯৯৪; এম.এ (ইসলামিক স্টাডিজ) ২০০৫।
ফোন- ০১৮১৯৬৭৬০২৭, ০১৫৫২৩৪৪৬০১
বাংলাদেশের ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ
মানব হৃদয়ের গভীরে সৌন্দর্য বোধের প্রতি যে তিয়াস, তা মেটায় শিল্পকলা।১ হৃদয় গহীনে একই সাথে জৈবিক ও মানবিক বা নৈতিক শিল্প পিপাসা পরস্পর ঠেলাঠেলি করে একে অপরকে পেছনে ফেলার জন্য। চোখ দিয়ে সৌন্দর্য আস্বাদন, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা আর কান দিয়ে যে সুর সৌন্দর্যের খোরাক মনের কাছে পৌঁছে তা জৈবিক বা নৈতিক হতে পারে। ধর্মই এখানে সৌন্দর্যের প্রতিরূপ বিবেচনা করে এর কতটা গ্রহণীয়-বর্জনীয় এবং বৈধ-অবৈধ, পরিণতি কী হতে পারে তা নির্ধারণ করে দেয়।২ সুতরাং যে শিল্পকলা মনের জৈবিক আকাংখাকে জাগিয়ে তোলে, লজ্জার চাদরকে ছিন্ন ভিন্ন করে, পবিত্র চেতনাকে বিবশ করে দেয়। সেটার পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ এবং সমাজ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তা ভয়ঙ্কর টর্নেডোর আঘাতের মতো। একথার সাথে সুকুমার শিল্প, অন্যদিকে পুজা অর্চনার জন্য শিল্প বলে যে শিল্পজগত রয়েছে সে সম্পর্কেও ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম সুস্পষ্ট সীমানা নির্দেশ করেছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করেছে।৩ আত্মা বা রুহ৪ নিষ্কলুষ ও পবিত্র শিল্পকে গ্রহণ করতে চায় এবং এই নির্মল আনন্দদায়ক ও পূণ্যানুভূতি জাগানিয়া শিল্পের রস আস্বাদনে সে পরিতৃপ্ত হয়।৫
ক্যালিগ্রাফি এমনই একটি শিল্পকলা। যাকে একদিকে বিশ্বশিল্পকলার অরিজিন বলা হয়েছে।৬ অন্যদিকে একে বেহেস্তী শিল্পকলা (্আর্ট অব হেভেন) এবং আধ্যাত্মিক শিল্পকলা বলা হয়েছে।৭ ইসলাম সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ রূপ দান করেছে।৮ ক্যালিগ্রাফি তাই একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পকলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ইতোপূর্বে বাংলাভাষায় বেশ কিছু লেখালেখি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে ক্যালিগ্রাফির অবস্থান কী, শৈল্পিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব ও বিকাশ কতটুকু এবং ভবিষ্যতে এ শিল্পকলার অবস্থান কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো। এজন্য শিল্পকলার অঙ্গনে যারা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে লেখালেখি করছেন এবং করেছেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু নিয়ে একটি সার্বিক আলোচনার প্রয়াস থাকবে এখানে। বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির আগমন ১২ শতকে সালতানাত আমলে। ইসলামী শিল্পকলার প্রধান উপাদান ক্যালিগ্রাফির উন্নয়নে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিলেন সুলতানগণ। যেজন্য সে সময় (১১৯২-১৫২৬) নির্ভেজাল আরবী ক্যালিগ্রাফির একটি স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধারা তুগরার প্রচলন দেখা যায়। বাংলায় এই তুগরার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরবি হরফের প্রয়োগ চাতুর্য্যে একে পানিতে ভাসমান হাঁস, তীর-ধনুক, চালাঘর, পানিতে চলমান নৌকার আকৃতিতে দেখা যায়।৯ সুলতানী আমলের পর মুঘল আমলে (১৫২৬-১৮৫৬) আরবী ক্যালিগ্রাফির সাথে নাস্তালিক ও শিকাস্তে নাস্তালিক ফার্সিধারা সংযুক্ত হয়।১০ ইংরেজ আমলে (১৮৫৭-১৯৪৭) বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির চর্চা প্রায় অস্তমিত হয়ে পড়ে। ঢাকার নবাব-নাজিমদের প্রচেষ্টায় কিছু কিছু ধারা যেমন গুলজার, তালিক, নাসখ প্রভৃতির প্রচলন ছিল ও ধীরে ধীরে তা সীমাবদ্ধ হয়ে আসে। কলকাতায় ছাপার যন্ত্রে এ সময়ে কলকাতা ছাপা নামে একটি সুদূর প্রসারী ধারা এদেশে প্রচলন করা হয়। যেজন্য সাধারণ মুসলিম জনসমষ্টি এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে আরবীর মূল ধারাগুলোর এখানে বলা যায় বিলুপ্তি ঘটে, এত সবের মধ্যেও লৌখনু ছাপা যেটি আরবী নাসখী ধারার এ দেশীয় প্রকরন, সেটি কোনমতে টিকে থাকে।১১
১৯ শতকে ঢাকার বেচারাম দেউড়ীর মির্জা গুলাম হোসাইনের পুত্র মির্জা বাহাদুর হোসাইনের একটি ক্যালিগ্রাফির সন্ধান পাওয়া যায়। নাস্তালিক শৈলী গুলজার ধারায় অঙ্কিত এই ক্যালিগ্রাফি চিত্রে মুসলিম প্রার্থনার তাসবিহ চমৎকার ফুলেল আঙ্গিকে করা হয়েছে। হরফের ভেতর ফাঁকা স্থানটি ফুলতাল-পাতার সুক্ষ্ম নকশা দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। হরফকে অন্য হরফের মধ্যে চাতুর্যের সাথে প্রবিষ্ট করা হয়েছে।১২ স্থানীয় ক্যালিগ্রাফারদের এই সুনিপুন দক্ষতা কর্মকুশলতা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ইংরেজ আমলে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। ১৯ শতকের প্রথম দিকে আবুল ফাতাহ সিরকা নামের একটি কুরআন স্ক্রল ক্যালিগ্রাফি করেন। যাতে বড় হরফে “ওয়া আলাল ইমাম হুসাইন আল শহীদ আল কারবালা” এবং হরফগুলো ক্ষুদ্্র হরফ দিয়ে লেখা হয়েছে নাসখ শৈলীতে।১৩ অষ্টাদশ শতকে ঢাকার ডেপুটি গভর্ণর মির্জা লুৎফুল্লাহ মাকসুর একজন খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঢাকার প্রশাসক নায়েব নাজিম নুসরাত জং বাহাদুর একজন ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফার ছিলেন, তার অনেক ছাত্র পরবর্তীতে খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়া নাস্তালিক লিপিতে ওস্তাদ আগা আবদুল আলীর ক্যালিগ্রাফি সমাজের ধনী ও আগ্রহী ব্যক্তিরা সংগ্রহ করেন। মুন্সী আরহাম ছিলেন সিকাস্তালিপির ওস্তাদ। ঢাকার হোসনী দালানের গায়ে উৎকীর্ণ লিপির ক্যালিগ্রাফার ছিলেন আলী হোসাইন। ঢাকার আরেক বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন মুন্সী মীর নূর আলী। তিনি ছিলেন নাস্তালিক ও কুফি শৈলীর ওস্তাদ।১৪
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ক্যালিগ্রাফী চর্চার তেমন কোন প্রামাণ্য দলিল আমাদের হাতে নেই। ১৯৬০ সালে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের মিহরাবে, গম্বুজের অভ্যন্তরে যে লিপির উপস্থাপন দেখি, বিশিষ্ট কাতিব সিরাজুল হক ইসলামাবাদী সেগুলোর ডিজাইন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকে তিনি আরবী ক্যালিগ্রাফী করেছেন।১৫ষাটের দশকে বাংলায় ক্যালিগ্রাফি করা যায় কিনা সে বিষয়ে পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। সোসাইটির উৎসাহে শিল্পী আ. রউফ ‘রেনেসাঁ’ শব্দটি ক্যালিগ্রাফি করে আলোড়ন তোলেন।১৬ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চার একটি আবহ তৈরী হয় শিল্পী ও এ বিষয়ে আগ্রহী লেখকদের ব্যক্তিগত প্রয়াসের মাধ্যমে।বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য প্রধানত দু’ধরনের। এক. শৈলী ভিত্তিক বা ট্রেডিশনাল দুই. পেইন্টিং নির্ভর।১৭
শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির আলোচনায় স্বাভাবিকভাবে নন্দনতত্ত্বের বিষয়টি এসে যায়। আক্ষরিক অর্থে শৈলী বিষয়ে গভীর অভিনিবেশ দাবী করে সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও শিল্প সমালোচকদের ওপর। শিল্পীদের কাজের মূল্যায়ন যেহেতু শিল্প সমালোচকরা করে থাকেন, এজন্য ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে সমালোচকদের দায় দায়িত্ব একটু বেশী রয়েছে বলে মনে করি। শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এদেশের প্রচলিত আরবী হরফ সম্পর্কে সাধারণের মাঝে যে ধারণা রয়েছে সেটা বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ দেশের জনগোষ্ঠির বৃহত্তম অংশ আরবি হরফ বলতে কোলকাতা ছাপার কুরআনের হরফ বুঝে থাকেন। এই হরফ মূলত: নিশ্চল বা গতিহীন টাইপ সেট। এতে হাতের লেখার জীবন্ত প্রবাহ খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও খুব সীমিত পরিসরে লৌখনু ছাপার কুরআন রয়েছে, তবু তা অধিকাংশের কাছে পাঠ করা কঠিন বলে অনুযোগ রয়েছে। সুতরাং শৈলী বিষয়ক নন্দন তত্ত্বের আলোচনায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরবী হরফের শৈলী বিষয়ক বিশুদ্ধতা যেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সেটা আরব দেশসমূহে বিশেষ করে তুরস্কে রয়েছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মগুলো যা গত তিন দশক ধরে শিল্পীগণ করেছেন। তার শৈলী ভিত্তিক বিবেচনা দেশীয় আঙ্গিকে যথেষ্ট আশাপ্রদ। এ কথা এজন্য বলা হচ্ছে, কারণ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফিতে শৈলীর উৎকর্ষতা উন্নীত এবং আন্তরিক। নিবেদিত প্রাণ শিল্পীগণ একক ও দলগত প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। বিদেশের ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে তাদের সরব অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মত। ২০০৭ সালে তুরস্কের আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে ৫ জন শিল্পী, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা নুরুল্লাহ, মোরশেদুল আলম, মাসুম বিল্লাহ ও সিদ্দিকা আফরিন লামিয়া অংশগ্রহণ করেন। শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশের সদস্য। যেহেতু প্রতি বছর আয়োজিত বিভিন্ন প্রদর্শনীতে শৈলীগত সৌন্দর্যরূপের পরিবর্তন হচ্ছে তাই সাম্প্রতিক শিল্পকর্মের এবং ৩ দশক আগের শিল্পকর্মের শৈলীগত পার্থক্য বেশ বড় ধরনের। সাম্প্রতিক ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র আয়োজিত ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মগুলোতে শৈলীর উৎকর্ষতা চোখে পড়ার মত। হরফের গতি প্রকৃতি, বিভিন্ন ফন্টের নিপুন উপস্থাপন, কম্পোজিশনে নতুনত্ব, এমনকি সাম্প্রতিক মুয়াল্লা শৈলীর বেশ কয়েকটি মান সম্মত কাজ প্রদর্শনীতে স্থান পায়।১৮আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দন তাত্ত্বিক স্বরূপ বা দর্শন কি? কয়েকটি বিষয় এর সাথে জড়িত, হরফের সঠিক সেপ ও সাইজ যেটা আল খাত আল মানসুব বা আনুপাতিক লেখনীর সাথে সম্পৃক্ত এবং ইবনে বাওয়াবের মানসুব আল ফায়েক অর্থাৎ সৌন্দর্যময় লেখনী আক্ষরিক অর্থে আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া ইয়াকুত আল মুস্তাসিমীর কলম কাটার কলা কৌশল এতে পূর্ণতা এনেছে, কালির প্রস্তুতবিধি, ব্যবহার নীতিমালা। কাগজ বা উপায়-উপকরণ একটি নির্দিষ্ট বিধিমালার অন্তর্ভূক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সুলুস লিপির আলিফটি ক্যালিগ্রাফি কলম দিয়ে লিখতে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। র’স বা মাথা হবে দেড় থেকে দুই ফোটা বা নোকতা বরাবর এবং জেসম বা শরীরটি ৫-৬ নোকতা বরাবর লম্বা হবে। শেষে মাথার নীচে কলমের ডান কোনা দিয়ে পূরণ করতে হয়। এটা হল সাধারণ নিয়ম কিন্তু হরফের আকৃতি ও পরিমাপ ঠিক রাখার সাথে সাথে এর রৈখিক বাঁক ও ভাজগুলোও যথাযথ করতে হয়। এটি সরাসরি নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট যেটা হাতে কলমে ওস্তাদ ছাত্রকে শিখিয়ে থাকেন। দর্শককেও এ বিষয়ে হাতে কলমে আত্মস্থ করতে হয়। আর ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ হাতে কলমে ক্যালিগ্রাফি শিখিয়ে আসছে ১৯৯৮ সাল থেকে। যেজন্য নবীন ক্যালিগ্রাফারদের বৃহৎ অংশটি শৈলীতে দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছে।১৯বাংলাদেশে শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি যারা চর্চা করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, শহীদুল্লাহ এফ. বারী, বসির মেসবাহ, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা, নেসার জামিল প্রমুখ। আরিফুর রহমানের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে খাগের কলমের সরাসরি প্রয়োগ অনুপস্থিত। কিন্তু তিনি শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির প্রতি যতœশীল। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে সুলস, নাসখ, দিওয়ানী, কুফী, রুকআ, নাস্তালিক, রায়হানী, মুহাক্কাক, ও মুয়াল্লা শৈলীর উপস্থাপন লক্ষ্য করা যায়। রঙের মাধ্যম হিসেবে পানি রং, কালি, এ্যাক্রিলিক, তেল রং মেটাল রং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাগজ, ক্যানভাস, কাঠ, পাথর, ধাতব মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি করা হয়ে থাকে।চিত্রকলায় যেমন শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির উপস্থাপন রয়েছে তেমনি স্থাপত্যে বিশেষ করে মসজিদ গাত্রে আরবি ক্যালিগ্রাফি ইদানিং বাংলা ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক উপস্থাপন দেখা যায়। শিল্পী আরিফুর রহমান ২০০২ সালে কুমিল্লার গুনাই ঘর ও ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ বরিশালের গুঠিয়ায় ২টি মসজিদে বাংলা-আরবীতে শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেছেন।২০ শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম ২০০০ সালে চট্টগ্রামে পতেঙ্গায় সলগোলা জামে মসজিদ, ২০০৩ সালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার, সুন্ধিসার জামে মসজিদ, ২০০৫ সালে ঢাকা সেনানীবাসে সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদ, ২০০৪ সালে বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদ, ২০০৬ সালে ঢাকা উত্তরার ৫নং সেক্টর জামে মসজিদ, ২০০৭ সালে হবিগঞ্জে শাহ সোলেমান ফতেহ গাজী (রহ:) দরগাহ-এ এবং ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে পুরান ঢাকায় একটি ইমারাত ভবনের চারটি ফটকে আগ্রার তাজমহলের ফটকের অনুরূপ সুরা ইয়াসিনের শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেন।২১ এসব স্থানে কুফি, সুলস, বেঙ্গল তুগরা, নাসখ, দিওয়ানী প্রভৃতি শৈলীতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। শিল্পী মনিরুল ইসলাম, শহীদুল্লাহ এফ. বারীসহ কয়েকজন শিল্পী বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদ, ধর্মীয় ইমারতে ক্যালিগ্রাফি করেছেন।২২বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বৃহত্তম অংশ হচ্ছে পেইন্টিং নির্ভর। আর এই পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে প্রবীন ও খ্যাতিমান শিল্পী মুর্তজা বশীরের শিল্পকর্ম এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের শিল্পকলার পেইন্টিংয়ে কিভাবে ক্যালিগ্রাফির সার্থক উপস্থাপন হতে পারে তা দেখিয়েছেন তিনি। তাকে বাংলাদেশের পেইটিং ক্যালিগ্রাফির পথিকৃত বলেছেন শিল্পবোদ্ধারা।২৩ প্রবীণ শিল্পী আবু তাহের, মরহুম শামসুল ইসলাম নিজামী, সবিহ-উল আলম, ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহিম মণ্ডল, আমিনুল ইসলাম আমিনসহ অর্ধ শতাধিক প্রবীণ নবীন শিল্পী আরবী-বাংলা হরফকে অনুসঙ্গ করে অসাধারণ সব ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং করে চলেছেন। শিল্পী আবু তাহের অর্ধবিমূর্ত ঢংয়ে পেইন্টিং করে থাকেন। আরবী হরফের পরস্পর ছন্দ ও গীতিময়তা একটি টান টান আকুলতা নিয়ে ফুটে ওঠে তার শিল্পকর্মে। রং, ফর্ম ও রেখার আশ্চর্য সম্মিলন দেখা যায় তার ক্যালিগ্রাফিতে। শিল্পী সবিহ-উল আলমের ক্যালিগ্রাফিতে ত্রিমাত্রিক ব্যঞ্জনা ফুটে ওঠে। শিল্পী ড. আব্দুস সাত্তারের ক্যালিগ্রাফিতে প্রাচ্যকলার আবেশ মূর্ত হয়ে ওঠে। সাইফুল ইসলাম নিজস্ব স্টাইল ও রংয়ের সমন্বয়ে এক ভিন্ন জগত তৈরী করেছেন। তার ক্যালিগ্রাফিতে তাই নাগরিক ক্যালিগ্রাফির মূখরতা দেখা যায়। ইব্রাহীম মণ্ডলের ক্যালিগ্রাফিতে বাংলার নিসর্গ, ফর্ম ও রেখার সাথে রঙের উজ্জ্বল্য উপস্থিতি দশর্ককে আকর্ষণ করে। আমিনুল ইসলাম আমিন চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বাস্তব জগতের সাথে আধ্যাত্মিক ক্যালিগ্রাফির সমন্বয় তুলে ধরেন তার শিল্পকর্মে। নিপুন তুলির ছোয়ায় তার শিল্প ভাস্বর হয়ে ওঠে।২৪এছাড়া আরো খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফি শিল্পী রয়েছেন, যেমন- আমিরুল হক, মাহবুব মুর্শিদ, ফরেজ আলী, রেজাউল করীম, রাসা, প্রমুখ তাদের ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং ও ভাষ্কর্য চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি অঙ্গনে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে হরফ যেহেতু অনুসঙ্গ হয়ে আসে, সেক্ষেত্রে শৈলীর উপস্থাপন হয় গণ্য। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে শৈলীও সমানভাবে পেইন্টিংয়ে উঠে আসে। তবে সেটা সংখ্যায় একেবারে হাতে গোনা। মূলত: পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে, রং, ফর্ম, দর্শন চিন্তা, ব্যাকরণ প্রভৃতি লক্ষ্য রাখা হয়। পেইন্টিংয়ে শিল্পকর্ম হতে গেলে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন শিল্পী সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখেন। ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে প্রায় সব শিল্পকর্মে এমন উপস্থাপন লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে পবিত্র কুরআন হাদিসের বাণী মূখ্য হয়ে আছে। এর সাথে শুধুমাত্র হরফের কম্পোজিশন যেমন আরিফুর রহমানের আলিফ বিন্যাস, ইব্রাহীম মণ্ডলের আলিফ নৃত্য শিল্পকর্মের কথা উল্লেখ করতে হয়।২৫ বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বাংলালিপি নির্ভর বহু উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহীম মণ্ডল, আরিফুর রহমান সহ অধিকাংশ শিল্পী তাদের শিল্প চর্চায় বাংলা ক্যালিগ্রাফিকে সযতেœ লালন করেছেন।২৬ এসব শিল্পকর্মে হরফের প্রান্তীয় স্ট্রোকগুলো প্রলম্বিত করে এবং কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে হরফকে ভেঙ্গেচুরে সমন্বয় ও ছন্দায়িত করার প্রয়াস চালানো হয়। অনেক শিল্পী তাদের কাজে বাংলা ক্যালিগ্রাফির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য না দিয়ে আরবী কুফি, সুলুস প্রভৃতির আদলে করতে চেয়েছেন, এতে অনেক শিল্পবোদ্ধা ভিন্ন মতামতও ব্যক্ত করেছেন।২৭ সাম্প্রতিক সময়ে পেইন্টিংয়ে যে বাংলা ক্যালিগ্রাফি দেখছি সেটা ৯০ দশকের শেষ দিকেও তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।২৮ বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প আক্ষরিক অর্থে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তিন দশক পর এই শিল্পের পথ চলায় প্রয়োজনীয় উপাদান উপকরণ যেমন সহজ লভ্য হয়েছে। তেমনি এর প্রতিষ্ঠায় একটি মজবুত ভিত্তিও পেয়েছে।২৯ বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জানার জন্য বইপত্র, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ সম্পর্কে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের এখন দেখা মেলে।৩০ একটা কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শিল্পীদের ব্যক্তিগত প্রয়াসকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে হয়। সেই সাথে যারা এ শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাদের অবদানও কম নয়। লেখালেখি, গবেষণার মাধ্যমে এ শিল্পের ইতিহাস সংরক্ষণ গতি প্রকৃতি মূল্যায়ন ও সবার কাছে এর পরিচয়, সৌন্দর্য, গুরুত্ব, অপরিহার্যতা তুলে ধরার জন্য নিরলস সাধনা যারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অবদান যেন আমরা ভুলে না যাই। এদেশে ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন, প্রসার ও জনপ্রিয় করতে ইতোমধ্যে যে রচনা সম্ভার ও বইপত্র প্রকাশ পেয়েছে তা নিতান্ত কম নয়। শতাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদনের সাথে বাংলাভাষায় এর ইতিহাস ক্রমধারা, শৈল্পিক বিশ্লেষণ নিয়ে গ্রন্থও রচনা করা হয়েছে।৩১ বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ওপর সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিও নিচ্ছেন অনেকে।৩২ক্যালিগ্রাফির এই বিস্তৃতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেশ লক্ষণীয় প্রভাব পড়েছে। ৮০ দশকের গোড়ার দিকে ক্যালেন্ডারে সিনেমার নায়িকা ও নারীচিত্র প্রধান উপাদান ছিল। কিন্তু এখন সেখানে ক্যালিগ্রাফি, মসজিদ বা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীই একচ্ছত্র স্থান দখল করে চলেছে। সরকারি বেসরকারি ইমারতে ইন্টেরিয়র সজ্জায় ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম বড় ধরনের স্থান করে নিয়েছে। এমন কি বিদেশে সরকারি উপহার সামগ্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম গুরুত্ব লাভ করেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে বহু ইমারতে ক্যালিগ্রাফি মুরাল, ফ্রেস্কো প্রভৃতি প্রাধান্য লাভ করছে।৩৩বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ক্যালিগ্রাফির যে বিস্তৃতি, তার মূল্যায়নে দেশের প্রথিতযশা কয়েকজন শিল্পীর মন্তব্য এখানে তুলে ধরছি। শিল্পী মুর্তজা বশীর বলেন, আমি একজন পেইন্টারের দৃষ্টি দিয়ে এটা বলতে পারি অক্ষর দিয়ে পেইন্টিং করার একটি প্রয়াস এখানে রয়েছে যাতে ক্যালিগ্রাফি ছাপিয়ে নান্দনিক রসের অনুভব আমরা পেতে পারি। শিল্পী আবু তাহের বলেন, বেশ কিছু শিল্পী গভীর মমত্ব ও আনুগত্য নিয়ে ক্যালিগ্রাফি চর্চায় মনযোগ দিয়েছেন এবং আনন্দের বিষয় এদের মধ্যে কেউ কেউ শিল্পবোদ্ধাদের মনে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হয়েছেন। শিল্পী সবিহ-উল আলম বলেন, ১৬২টি ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম নিয়ে ৬ষ্ঠ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৩ গুণে মানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা নি:সন্দেহে যেমন আনন্দের তেমনই গৌরবের। স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পী মনিরুল ইসলাম ক্যালিগ্রাফিকে মিস্ট্রিক্যাল ফর্ম উল্লেখ করে বলেন বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তিনি শিল্পীদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। ১২তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে গ্রান্ড প্রাইজ প্রাপ্ত ইরানের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সিদাঘাত জাব্বারী বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি চর্চার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এজন্য তিনি ক্যলিগ্রাফী প্রদর্শনীগুলোর আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। পাকিস্তানের বিখ্যাত শিল্পী গুলজীও বাংরাদেশের ক্যালিগ্রাফির প্রশংসা করেছেন এবং উত্তরোত্তর উন্নয়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।৩৪ক্যালিগ্রাফি চর্চা বাংলাদেশে এখনো সেইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেনি। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ কোর্স, ওয়ার্কশপ, ডেমন্সট্রেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত কিংবা আলাদা ফ্যাকাল্টিও হতে পারে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ভবিষ্যত উজ্জ্বল। ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য একটি স্থায়ী গ্যালারী এখনো নেই। তবে এরও ব্যবস্থা হয়ে যাবে এমন আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।৩৫ ব্যক্তিগতভাবে ক্যালিগ্রাফি আর্কাইভ গড়ে উঠছে।৩৬ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যে আয়োজন ও উপায়-উপকরণ ও ভিত্তির প্রয়োজন, তার বহুলাংশ ইতোমধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে।বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও বলিষ্ঠ শিল্প মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এগিয়ে চলেছে। এর ভবিষ্যত উজ্জ্বল ও কুসুমাস্তীর্ণ করতে সংশ্লিষ্ট সবার যেমন গুরু দায়িত্ব রয়েছে তেমনি রাজকীয় শিল্পকলা হিসেবে সরকারের অকুণ্ঠ পৃষ্ঠপোষতার দাবি রাখে। বিষয়টিকে বিবেচনার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাই।
তথ্য সূত্র ও টীকা :
১. ক) সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত, ‘আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) নিজে সুন্দর তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ সুতরাং আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি মানুষকে সুন্দর অবয়বে তৈরী করেছেন (সূরা ৯৫, আয়াত-৪) তিনি নিজেও শিল্পী (সূরা ৫৯, আয়াত-২৪) খ) ড. আবদুস সাত্তার, প্রকৃত শিল্পের স্বরূপ সন্ধানে, পৃ : ১১-১৬।
২. তোমরা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার নিকটে যেওনা (সূরা ৬, আয়াত-১৫১) আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বিশ্বাসী পুরুষ-নারীকে দৃষ্টি অবনত, লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ এবং দেহের সৌন্দর্য-অঙ্গকে ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা ২৪ : আয়াত ৩০-৩১)
৩. ড. আবদুস সাত্তার, প্রকৃত শিল্পের স্বরূপ সন্ধান, পৃ-৬০।
৪. পবিত্র কুরআনে রুহের প্রকৃতিকে নফস বলেও অভিহিত করা হয়েছে। স্বভাবগতভাবে নফসকে তিন ধরনের উল্লেখ করা হয়েছে।
এক. নফস আম্মারাহ- যা মন্দ কর্মপ্রবন। (সূরা ১২ : আয়াত-৫৩) দুই. নফস লাউয়ামাহ- যা মন্দ কাজের পর অনুতপ্ত হয়। (সূরা ৭৫ : আয়াত-২) তিন. নফস মুতমাইন্নাহ- যা সৎ ও উত্তম কর্মপ্রবণ ও পরিতৃপ্ত আত্মা। (সূরা ৮৯ : আয়াত-২৭)রুহ সম্পর্কে বলা হয়েছে- রুহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার একটি আদেশ। (সূরা ১৭, : আয়াত-৮৫)
৫. সৈয়দ আলী আহসান, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, পৃষ্ঠা ২১৬-২১৭।৬. শিল্পী আমিনুল ইসলামের একক ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৮ ক্যাটালগ, এবং মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮।
৭. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শৈল্পিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ, দৈনিক সংগ্রাম, ঈদ সংখ্যা ২০০৭ (অক্টোবর)।
৮. সৈয়দ আলী আহসান, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, পৃষ্ঠা ২১৬-২১৭।
৯. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ২০০২, পৃ-৬২।
১০. Dr. A. K. M. Yaqub Ali, Select Arabic and Persian Epigraphs, 1988, PP 16-77. ১৬-৭৭. এবং অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, মুসলিম ক্যালিগ্রাফি, ২০০৫, পৃ-৬৬।
১১. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ২০০২, পৃ-৬২-৬৩।
১২ Catalogue of the special Exhibition of Islamic Art in Bangladesh in Dhaka Museum, April 1978, P-21.
১৩. Do. P-18
১৪. মুহাম্মদ নূরুর রহমান, আরবী ক্যালিগ্রাফীর উদ্ভব ও বিকাশ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভ ২০০৫) পৃ- ৬৭-৬৮
১৫. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ২০০২, পৃ- ৭৮-৭৯
১৬. মুহাম্মদ নূরুর রহমান, অভিসন্দর্ভ ২০০৫, পৃ-৬৮
১৭. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, ৭ ফেব্র“য়ারী ২০০৭
১৮. ফাতেমাতুজ জোহরা, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আবদুর রহীমের শিল্পকর্ম, দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ জুলাই ২০০৮ ও মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮
১৯. ক্যালিগ্রাফ আর্ট, প্রথম সংখ্যা, আগস্ট-২০০৩
২০. ক্যালিগ্রাফি, ১ম সংখ্যা, মার্চ-মে ২০০৮, পৃ-৬
২১. ফাতেমাতুজ জোহরা, বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী শিল্পধারা: ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক সংগ্রাম, ১৬ জানুয়ারী ২০০৭ এবং পুরান ঢাকায় তাজমহলের ক্যালিগ্রাফি, ক্যাটালগ, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ২০০৮
২২. মুহাম্মদ নুরুর রহমান, অভিসন্দর্ভ, ২০০৫, পৃষ্ঠা-৮৫
২৩. ক্যালিগ্রাফার আর্ট, প্রথম সংখ্যা, আগস্ট ২০০৩, পৃষ্ঠা-৫
২৪. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮।
২৫. ক্যালিগ্রাফি, মার্চ-মে ২০০৮, পৃ-৮ এবং ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৭, শিল্পকলা একাডেমী গ্যালারী।
২৬. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি : ঐতিহ্য ও শিল্পবোধের পথে যাত্রা, দৈনিক সংগ্রাম, ১৩ মার্চ, ২০০৫।
২৭. আশরাফুল ইসলাম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক ভাবনা, ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি স্মারক (১৯৫২-২০০২), জুলাই ২০০২, পৃ ১২৪-১৩৮্
২৮. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি : সম্ভাব্যতা ও চলমান ধারা, দৈনিক সংগ্রাম, ৯ মে, ১৯৯৭।
২৯. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফি : বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প, দৈনিক বাংলাবাজার, ৩০ জুন, ২০০৬।
৩০. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইন্টারনেটে ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক সংগ্রাম, ২১ মে, ২০০৮।
৩১. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ২৬ মে, ২০০৬ এবং নান্দনিকতার নব আলেখ্য বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ১১ জুন, ২০০৪ এবং বাংলাদেশের ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ৯ জুলাই, ২০০৪।
৩২. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, ৭ ফেব্র“য়ারী, ২০০৭।
৩৩. ২০০৫ সালে সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঢাকার শহীদবাগস্থ বাসভবনে প্রস্ফুটিত ফুলের আকৃতির একটি তুগরা ক্যালিগ্রাফি ফ্রেস্কো করেন শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম। এ ছাড়াও অন্যান্য ক্যালিগ্রাফি শিল্পী বিভিন্ন স্থানে এ মাধ্যমে কাজ করছেন।
৩৪. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফি : বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প, দৈনিক বাংলাবাজার, ৩০ জুন, ২০০৬।
৩৫. ইসলামিক আর্ট অর্গানাইজেশন, ঢাকা তাদের কর্মপরিকল্পনায় এ বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করছেন।
৩৬. ফাতেমাতুজ জোহরা, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আবদুর রহীমের শিল্পকর্ম, দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ জুলাই, ২০০৮।
[-মোহাম্মদ আবদুর রহীম : শিল্পী, গবেষক, গ্রন্থকার ও সেক্রেটারি, ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ, প্রশিক্ষক, ক্যালিগ্রাফির শৈলী বিষয়ক কোর্স।]
ক্যালিগ্রাফি এমনই একটি শিল্পকলা। যাকে একদিকে বিশ্বশিল্পকলার অরিজিন বলা হয়েছে।৬ অন্যদিকে একে বেহেস্তী শিল্পকলা (্আর্ট অব হেভেন) এবং আধ্যাত্মিক শিল্পকলা বলা হয়েছে।৭ ইসলাম সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ রূপ দান করেছে।৮ ক্যালিগ্রাফি তাই একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পকলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ইতোপূর্বে বাংলাভাষায় বেশ কিছু লেখালেখি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে ক্যালিগ্রাফির অবস্থান কী, শৈল্পিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব ও বিকাশ কতটুকু এবং ভবিষ্যতে এ শিল্পকলার অবস্থান কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো। এজন্য শিল্পকলার অঙ্গনে যারা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে লেখালেখি করছেন এবং করেছেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু নিয়ে একটি সার্বিক আলোচনার প্রয়াস থাকবে এখানে। বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির আগমন ১২ শতকে সালতানাত আমলে। ইসলামী শিল্পকলার প্রধান উপাদান ক্যালিগ্রাফির উন্নয়নে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিলেন সুলতানগণ। যেজন্য সে সময় (১১৯২-১৫২৬) নির্ভেজাল আরবী ক্যালিগ্রাফির একটি স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধারা তুগরার প্রচলন দেখা যায়। বাংলায় এই তুগরার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরবি হরফের প্রয়োগ চাতুর্য্যে একে পানিতে ভাসমান হাঁস, তীর-ধনুক, চালাঘর, পানিতে চলমান নৌকার আকৃতিতে দেখা যায়।৯ সুলতানী আমলের পর মুঘল আমলে (১৫২৬-১৮৫৬) আরবী ক্যালিগ্রাফির সাথে নাস্তালিক ও শিকাস্তে নাস্তালিক ফার্সিধারা সংযুক্ত হয়।১০ ইংরেজ আমলে (১৮৫৭-১৯৪৭) বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির চর্চা প্রায় অস্তমিত হয়ে পড়ে। ঢাকার নবাব-নাজিমদের প্রচেষ্টায় কিছু কিছু ধারা যেমন গুলজার, তালিক, নাসখ প্রভৃতির প্রচলন ছিল ও ধীরে ধীরে তা সীমাবদ্ধ হয়ে আসে। কলকাতায় ছাপার যন্ত্রে এ সময়ে কলকাতা ছাপা নামে একটি সুদূর প্রসারী ধারা এদেশে প্রচলন করা হয়। যেজন্য সাধারণ মুসলিম জনসমষ্টি এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে আরবীর মূল ধারাগুলোর এখানে বলা যায় বিলুপ্তি ঘটে, এত সবের মধ্যেও লৌখনু ছাপা যেটি আরবী নাসখী ধারার এ দেশীয় প্রকরন, সেটি কোনমতে টিকে থাকে।১১
১৯ শতকে ঢাকার বেচারাম দেউড়ীর মির্জা গুলাম হোসাইনের পুত্র মির্জা বাহাদুর হোসাইনের একটি ক্যালিগ্রাফির সন্ধান পাওয়া যায়। নাস্তালিক শৈলী গুলজার ধারায় অঙ্কিত এই ক্যালিগ্রাফি চিত্রে মুসলিম প্রার্থনার তাসবিহ চমৎকার ফুলেল আঙ্গিকে করা হয়েছে। হরফের ভেতর ফাঁকা স্থানটি ফুলতাল-পাতার সুক্ষ্ম নকশা দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। হরফকে অন্য হরফের মধ্যে চাতুর্যের সাথে প্রবিষ্ট করা হয়েছে।১২ স্থানীয় ক্যালিগ্রাফারদের এই সুনিপুন দক্ষতা কর্মকুশলতা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ইংরেজ আমলে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। ১৯ শতকের প্রথম দিকে আবুল ফাতাহ সিরকা নামের একটি কুরআন স্ক্রল ক্যালিগ্রাফি করেন। যাতে বড় হরফে “ওয়া আলাল ইমাম হুসাইন আল শহীদ আল কারবালা” এবং হরফগুলো ক্ষুদ্্র হরফ দিয়ে লেখা হয়েছে নাসখ শৈলীতে।১৩ অষ্টাদশ শতকে ঢাকার ডেপুটি গভর্ণর মির্জা লুৎফুল্লাহ মাকসুর একজন খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঢাকার প্রশাসক নায়েব নাজিম নুসরাত জং বাহাদুর একজন ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফার ছিলেন, তার অনেক ছাত্র পরবর্তীতে খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়া নাস্তালিক লিপিতে ওস্তাদ আগা আবদুল আলীর ক্যালিগ্রাফি সমাজের ধনী ও আগ্রহী ব্যক্তিরা সংগ্রহ করেন। মুন্সী আরহাম ছিলেন সিকাস্তালিপির ওস্তাদ। ঢাকার হোসনী দালানের গায়ে উৎকীর্ণ লিপির ক্যালিগ্রাফার ছিলেন আলী হোসাইন। ঢাকার আরেক বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন মুন্সী মীর নূর আলী। তিনি ছিলেন নাস্তালিক ও কুফি শৈলীর ওস্তাদ।১৪
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ক্যালিগ্রাফী চর্চার তেমন কোন প্রামাণ্য দলিল আমাদের হাতে নেই। ১৯৬০ সালে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের মিহরাবে, গম্বুজের অভ্যন্তরে যে লিপির উপস্থাপন দেখি, বিশিষ্ট কাতিব সিরাজুল হক ইসলামাবাদী সেগুলোর ডিজাইন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকে তিনি আরবী ক্যালিগ্রাফী করেছেন।১৫ষাটের দশকে বাংলায় ক্যালিগ্রাফি করা যায় কিনা সে বিষয়ে পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। সোসাইটির উৎসাহে শিল্পী আ. রউফ ‘রেনেসাঁ’ শব্দটি ক্যালিগ্রাফি করে আলোড়ন তোলেন।১৬ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চার একটি আবহ তৈরী হয় শিল্পী ও এ বিষয়ে আগ্রহী লেখকদের ব্যক্তিগত প্রয়াসের মাধ্যমে।বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য প্রধানত দু’ধরনের। এক. শৈলী ভিত্তিক বা ট্রেডিশনাল দুই. পেইন্টিং নির্ভর।১৭
শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির আলোচনায় স্বাভাবিকভাবে নন্দনতত্ত্বের বিষয়টি এসে যায়। আক্ষরিক অর্থে শৈলী বিষয়ে গভীর অভিনিবেশ দাবী করে সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও শিল্প সমালোচকদের ওপর। শিল্পীদের কাজের মূল্যায়ন যেহেতু শিল্প সমালোচকরা করে থাকেন, এজন্য ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে সমালোচকদের দায় দায়িত্ব একটু বেশী রয়েছে বলে মনে করি। শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এদেশের প্রচলিত আরবী হরফ সম্পর্কে সাধারণের মাঝে যে ধারণা রয়েছে সেটা বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ দেশের জনগোষ্ঠির বৃহত্তম অংশ আরবি হরফ বলতে কোলকাতা ছাপার কুরআনের হরফ বুঝে থাকেন। এই হরফ মূলত: নিশ্চল বা গতিহীন টাইপ সেট। এতে হাতের লেখার জীবন্ত প্রবাহ খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও খুব সীমিত পরিসরে লৌখনু ছাপার কুরআন রয়েছে, তবু তা অধিকাংশের কাছে পাঠ করা কঠিন বলে অনুযোগ রয়েছে। সুতরাং শৈলী বিষয়ক নন্দন তত্ত্বের আলোচনায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরবী হরফের শৈলী বিষয়ক বিশুদ্ধতা যেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সেটা আরব দেশসমূহে বিশেষ করে তুরস্কে রয়েছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মগুলো যা গত তিন দশক ধরে শিল্পীগণ করেছেন। তার শৈলী ভিত্তিক বিবেচনা দেশীয় আঙ্গিকে যথেষ্ট আশাপ্রদ। এ কথা এজন্য বলা হচ্ছে, কারণ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফিতে শৈলীর উৎকর্ষতা উন্নীত এবং আন্তরিক। নিবেদিত প্রাণ শিল্পীগণ একক ও দলগত প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। বিদেশের ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে তাদের সরব অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মত। ২০০৭ সালে তুরস্কের আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে ৫ জন শিল্পী, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা নুরুল্লাহ, মোরশেদুল আলম, মাসুম বিল্লাহ ও সিদ্দিকা আফরিন লামিয়া অংশগ্রহণ করেন। শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশের সদস্য। যেহেতু প্রতি বছর আয়োজিত বিভিন্ন প্রদর্শনীতে শৈলীগত সৌন্দর্যরূপের পরিবর্তন হচ্ছে তাই সাম্প্রতিক শিল্পকর্মের এবং ৩ দশক আগের শিল্পকর্মের শৈলীগত পার্থক্য বেশ বড় ধরনের। সাম্প্রতিক ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র আয়োজিত ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মগুলোতে শৈলীর উৎকর্ষতা চোখে পড়ার মত। হরফের গতি প্রকৃতি, বিভিন্ন ফন্টের নিপুন উপস্থাপন, কম্পোজিশনে নতুনত্ব, এমনকি সাম্প্রতিক মুয়াল্লা শৈলীর বেশ কয়েকটি মান সম্মত কাজ প্রদর্শনীতে স্থান পায়।১৮আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দন তাত্ত্বিক স্বরূপ বা দর্শন কি? কয়েকটি বিষয় এর সাথে জড়িত, হরফের সঠিক সেপ ও সাইজ যেটা আল খাত আল মানসুব বা আনুপাতিক লেখনীর সাথে সম্পৃক্ত এবং ইবনে বাওয়াবের মানসুব আল ফায়েক অর্থাৎ সৌন্দর্যময় লেখনী আক্ষরিক অর্থে আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া ইয়াকুত আল মুস্তাসিমীর কলম কাটার কলা কৌশল এতে পূর্ণতা এনেছে, কালির প্রস্তুতবিধি, ব্যবহার নীতিমালা। কাগজ বা উপায়-উপকরণ একটি নির্দিষ্ট বিধিমালার অন্তর্ভূক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সুলুস লিপির আলিফটি ক্যালিগ্রাফি কলম দিয়ে লিখতে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। র’স বা মাথা হবে দেড় থেকে দুই ফোটা বা নোকতা বরাবর এবং জেসম বা শরীরটি ৫-৬ নোকতা বরাবর লম্বা হবে। শেষে মাথার নীচে কলমের ডান কোনা দিয়ে পূরণ করতে হয়। এটা হল সাধারণ নিয়ম কিন্তু হরফের আকৃতি ও পরিমাপ ঠিক রাখার সাথে সাথে এর রৈখিক বাঁক ও ভাজগুলোও যথাযথ করতে হয়। এটি সরাসরি নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট যেটা হাতে কলমে ওস্তাদ ছাত্রকে শিখিয়ে থাকেন। দর্শককেও এ বিষয়ে হাতে কলমে আত্মস্থ করতে হয়। আর ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ হাতে কলমে ক্যালিগ্রাফি শিখিয়ে আসছে ১৯৯৮ সাল থেকে। যেজন্য নবীন ক্যালিগ্রাফারদের বৃহৎ অংশটি শৈলীতে দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছে।১৯বাংলাদেশে শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি যারা চর্চা করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, শহীদুল্লাহ এফ. বারী, বসির মেসবাহ, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা, নেসার জামিল প্রমুখ। আরিফুর রহমানের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে খাগের কলমের সরাসরি প্রয়োগ অনুপস্থিত। কিন্তু তিনি শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির প্রতি যতœশীল। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে সুলস, নাসখ, দিওয়ানী, কুফী, রুকআ, নাস্তালিক, রায়হানী, মুহাক্কাক, ও মুয়াল্লা শৈলীর উপস্থাপন লক্ষ্য করা যায়। রঙের মাধ্যম হিসেবে পানি রং, কালি, এ্যাক্রিলিক, তেল রং মেটাল রং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাগজ, ক্যানভাস, কাঠ, পাথর, ধাতব মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি করা হয়ে থাকে।চিত্রকলায় যেমন শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির উপস্থাপন রয়েছে তেমনি স্থাপত্যে বিশেষ করে মসজিদ গাত্রে আরবি ক্যালিগ্রাফি ইদানিং বাংলা ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক উপস্থাপন দেখা যায়। শিল্পী আরিফুর রহমান ২০০২ সালে কুমিল্লার গুনাই ঘর ও ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ বরিশালের গুঠিয়ায় ২টি মসজিদে বাংলা-আরবীতে শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেছেন।২০ শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম ২০০০ সালে চট্টগ্রামে পতেঙ্গায় সলগোলা জামে মসজিদ, ২০০৩ সালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার, সুন্ধিসার জামে মসজিদ, ২০০৫ সালে ঢাকা সেনানীবাসে সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদ, ২০০৪ সালে বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদ, ২০০৬ সালে ঢাকা উত্তরার ৫নং সেক্টর জামে মসজিদ, ২০০৭ সালে হবিগঞ্জে শাহ সোলেমান ফতেহ গাজী (রহ:) দরগাহ-এ এবং ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে পুরান ঢাকায় একটি ইমারাত ভবনের চারটি ফটকে আগ্রার তাজমহলের ফটকের অনুরূপ সুরা ইয়াসিনের শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেন।২১ এসব স্থানে কুফি, সুলস, বেঙ্গল তুগরা, নাসখ, দিওয়ানী প্রভৃতি শৈলীতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। শিল্পী মনিরুল ইসলাম, শহীদুল্লাহ এফ. বারীসহ কয়েকজন শিল্পী বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদ, ধর্মীয় ইমারতে ক্যালিগ্রাফি করেছেন।২২বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বৃহত্তম অংশ হচ্ছে পেইন্টিং নির্ভর। আর এই পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে প্রবীন ও খ্যাতিমান শিল্পী মুর্তজা বশীরের শিল্পকর্ম এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের শিল্পকলার পেইন্টিংয়ে কিভাবে ক্যালিগ্রাফির সার্থক উপস্থাপন হতে পারে তা দেখিয়েছেন তিনি। তাকে বাংলাদেশের পেইটিং ক্যালিগ্রাফির পথিকৃত বলেছেন শিল্পবোদ্ধারা।২৩ প্রবীণ শিল্পী আবু তাহের, মরহুম শামসুল ইসলাম নিজামী, সবিহ-উল আলম, ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহিম মণ্ডল, আমিনুল ইসলাম আমিনসহ অর্ধ শতাধিক প্রবীণ নবীন শিল্পী আরবী-বাংলা হরফকে অনুসঙ্গ করে অসাধারণ সব ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং করে চলেছেন। শিল্পী আবু তাহের অর্ধবিমূর্ত ঢংয়ে পেইন্টিং করে থাকেন। আরবী হরফের পরস্পর ছন্দ ও গীতিময়তা একটি টান টান আকুলতা নিয়ে ফুটে ওঠে তার শিল্পকর্মে। রং, ফর্ম ও রেখার আশ্চর্য সম্মিলন দেখা যায় তার ক্যালিগ্রাফিতে। শিল্পী সবিহ-উল আলমের ক্যালিগ্রাফিতে ত্রিমাত্রিক ব্যঞ্জনা ফুটে ওঠে। শিল্পী ড. আব্দুস সাত্তারের ক্যালিগ্রাফিতে প্রাচ্যকলার আবেশ মূর্ত হয়ে ওঠে। সাইফুল ইসলাম নিজস্ব স্টাইল ও রংয়ের সমন্বয়ে এক ভিন্ন জগত তৈরী করেছেন। তার ক্যালিগ্রাফিতে তাই নাগরিক ক্যালিগ্রাফির মূখরতা দেখা যায়। ইব্রাহীম মণ্ডলের ক্যালিগ্রাফিতে বাংলার নিসর্গ, ফর্ম ও রেখার সাথে রঙের উজ্জ্বল্য উপস্থিতি দশর্ককে আকর্ষণ করে। আমিনুল ইসলাম আমিন চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বাস্তব জগতের সাথে আধ্যাত্মিক ক্যালিগ্রাফির সমন্বয় তুলে ধরেন তার শিল্পকর্মে। নিপুন তুলির ছোয়ায় তার শিল্প ভাস্বর হয়ে ওঠে।২৪এছাড়া আরো খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফি শিল্পী রয়েছেন, যেমন- আমিরুল হক, মাহবুব মুর্শিদ, ফরেজ আলী, রেজাউল করীম, রাসা, প্রমুখ তাদের ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং ও ভাষ্কর্য চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি অঙ্গনে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে হরফ যেহেতু অনুসঙ্গ হয়ে আসে, সেক্ষেত্রে শৈলীর উপস্থাপন হয় গণ্য। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে শৈলীও সমানভাবে পেইন্টিংয়ে উঠে আসে। তবে সেটা সংখ্যায় একেবারে হাতে গোনা। মূলত: পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে, রং, ফর্ম, দর্শন চিন্তা, ব্যাকরণ প্রভৃতি লক্ষ্য রাখা হয়। পেইন্টিংয়ে শিল্পকর্ম হতে গেলে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন শিল্পী সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখেন। ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে প্রায় সব শিল্পকর্মে এমন উপস্থাপন লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে পবিত্র কুরআন হাদিসের বাণী মূখ্য হয়ে আছে। এর সাথে শুধুমাত্র হরফের কম্পোজিশন যেমন আরিফুর রহমানের আলিফ বিন্যাস, ইব্রাহীম মণ্ডলের আলিফ নৃত্য শিল্পকর্মের কথা উল্লেখ করতে হয়।২৫ বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বাংলালিপি নির্ভর বহু উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহীম মণ্ডল, আরিফুর রহমান সহ অধিকাংশ শিল্পী তাদের শিল্প চর্চায় বাংলা ক্যালিগ্রাফিকে সযতেœ লালন করেছেন।২৬ এসব শিল্পকর্মে হরফের প্রান্তীয় স্ট্রোকগুলো প্রলম্বিত করে এবং কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে হরফকে ভেঙ্গেচুরে সমন্বয় ও ছন্দায়িত করার প্রয়াস চালানো হয়। অনেক শিল্পী তাদের কাজে বাংলা ক্যালিগ্রাফির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য না দিয়ে আরবী কুফি, সুলুস প্রভৃতির আদলে করতে চেয়েছেন, এতে অনেক শিল্পবোদ্ধা ভিন্ন মতামতও ব্যক্ত করেছেন।২৭ সাম্প্রতিক সময়ে পেইন্টিংয়ে যে বাংলা ক্যালিগ্রাফি দেখছি সেটা ৯০ দশকের শেষ দিকেও তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।২৮ বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প আক্ষরিক অর্থে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তিন দশক পর এই শিল্পের পথ চলায় প্রয়োজনীয় উপাদান উপকরণ যেমন সহজ লভ্য হয়েছে। তেমনি এর প্রতিষ্ঠায় একটি মজবুত ভিত্তিও পেয়েছে।২৯ বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জানার জন্য বইপত্র, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ সম্পর্কে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের এখন দেখা মেলে।৩০ একটা কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শিল্পীদের ব্যক্তিগত প্রয়াসকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে হয়। সেই সাথে যারা এ শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাদের অবদানও কম নয়। লেখালেখি, গবেষণার মাধ্যমে এ শিল্পের ইতিহাস সংরক্ষণ গতি প্রকৃতি মূল্যায়ন ও সবার কাছে এর পরিচয়, সৌন্দর্য, গুরুত্ব, অপরিহার্যতা তুলে ধরার জন্য নিরলস সাধনা যারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অবদান যেন আমরা ভুলে না যাই। এদেশে ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন, প্রসার ও জনপ্রিয় করতে ইতোমধ্যে যে রচনা সম্ভার ও বইপত্র প্রকাশ পেয়েছে তা নিতান্ত কম নয়। শতাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদনের সাথে বাংলাভাষায় এর ইতিহাস ক্রমধারা, শৈল্পিক বিশ্লেষণ নিয়ে গ্রন্থও রচনা করা হয়েছে।৩১ বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ওপর সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিও নিচ্ছেন অনেকে।৩২ক্যালিগ্রাফির এই বিস্তৃতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেশ লক্ষণীয় প্রভাব পড়েছে। ৮০ দশকের গোড়ার দিকে ক্যালেন্ডারে সিনেমার নায়িকা ও নারীচিত্র প্রধান উপাদান ছিল। কিন্তু এখন সেখানে ক্যালিগ্রাফি, মসজিদ বা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীই একচ্ছত্র স্থান দখল করে চলেছে। সরকারি বেসরকারি ইমারতে ইন্টেরিয়র সজ্জায় ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম বড় ধরনের স্থান করে নিয়েছে। এমন কি বিদেশে সরকারি উপহার সামগ্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম গুরুত্ব লাভ করেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে বহু ইমারতে ক্যালিগ্রাফি মুরাল, ফ্রেস্কো প্রভৃতি প্রাধান্য লাভ করছে।৩৩বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ক্যালিগ্রাফির যে বিস্তৃতি, তার মূল্যায়নে দেশের প্রথিতযশা কয়েকজন শিল্পীর মন্তব্য এখানে তুলে ধরছি। শিল্পী মুর্তজা বশীর বলেন, আমি একজন পেইন্টারের দৃষ্টি দিয়ে এটা বলতে পারি অক্ষর দিয়ে পেইন্টিং করার একটি প্রয়াস এখানে রয়েছে যাতে ক্যালিগ্রাফি ছাপিয়ে নান্দনিক রসের অনুভব আমরা পেতে পারি। শিল্পী আবু তাহের বলেন, বেশ কিছু শিল্পী গভীর মমত্ব ও আনুগত্য নিয়ে ক্যালিগ্রাফি চর্চায় মনযোগ দিয়েছেন এবং আনন্দের বিষয় এদের মধ্যে কেউ কেউ শিল্পবোদ্ধাদের মনে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হয়েছেন। শিল্পী সবিহ-উল আলম বলেন, ১৬২টি ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম নিয়ে ৬ষ্ঠ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৩ গুণে মানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা নি:সন্দেহে যেমন আনন্দের তেমনই গৌরবের। স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পী মনিরুল ইসলাম ক্যালিগ্রাফিকে মিস্ট্রিক্যাল ফর্ম উল্লেখ করে বলেন বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তিনি শিল্পীদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। ১২তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে গ্রান্ড প্রাইজ প্রাপ্ত ইরানের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সিদাঘাত জাব্বারী বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি চর্চার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এজন্য তিনি ক্যলিগ্রাফী প্রদর্শনীগুলোর আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। পাকিস্তানের বিখ্যাত শিল্পী গুলজীও বাংরাদেশের ক্যালিগ্রাফির প্রশংসা করেছেন এবং উত্তরোত্তর উন্নয়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।৩৪ক্যালিগ্রাফি চর্চা বাংলাদেশে এখনো সেইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেনি। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ কোর্স, ওয়ার্কশপ, ডেমন্সট্রেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত কিংবা আলাদা ফ্যাকাল্টিও হতে পারে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ভবিষ্যত উজ্জ্বল। ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য একটি স্থায়ী গ্যালারী এখনো নেই। তবে এরও ব্যবস্থা হয়ে যাবে এমন আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।৩৫ ব্যক্তিগতভাবে ক্যালিগ্রাফি আর্কাইভ গড়ে উঠছে।৩৬ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যে আয়োজন ও উপায়-উপকরণ ও ভিত্তির প্রয়োজন, তার বহুলাংশ ইতোমধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে।বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও বলিষ্ঠ শিল্প মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এগিয়ে চলেছে। এর ভবিষ্যত উজ্জ্বল ও কুসুমাস্তীর্ণ করতে সংশ্লিষ্ট সবার যেমন গুরু দায়িত্ব রয়েছে তেমনি রাজকীয় শিল্পকলা হিসেবে সরকারের অকুণ্ঠ পৃষ্ঠপোষতার দাবি রাখে। বিষয়টিকে বিবেচনার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাই।
তথ্য সূত্র ও টীকা :
১. ক) সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত, ‘আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) নিজে সুন্দর তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ সুতরাং আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি মানুষকে সুন্দর অবয়বে তৈরী করেছেন (সূরা ৯৫, আয়াত-৪) তিনি নিজেও শিল্পী (সূরা ৫৯, আয়াত-২৪) খ) ড. আবদুস সাত্তার, প্রকৃত শিল্পের স্বরূপ সন্ধানে, পৃ : ১১-১৬।
২. তোমরা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার নিকটে যেওনা (সূরা ৬, আয়াত-১৫১) আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বিশ্বাসী পুরুষ-নারীকে দৃষ্টি অবনত, লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ এবং দেহের সৌন্দর্য-অঙ্গকে ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা ২৪ : আয়াত ৩০-৩১)
৩. ড. আবদুস সাত্তার, প্রকৃত শিল্পের স্বরূপ সন্ধান, পৃ-৬০।
৪. পবিত্র কুরআনে রুহের প্রকৃতিকে নফস বলেও অভিহিত করা হয়েছে। স্বভাবগতভাবে নফসকে তিন ধরনের উল্লেখ করা হয়েছে।
এক. নফস আম্মারাহ- যা মন্দ কর্মপ্রবন। (সূরা ১২ : আয়াত-৫৩) দুই. নফস লাউয়ামাহ- যা মন্দ কাজের পর অনুতপ্ত হয়। (সূরা ৭৫ : আয়াত-২) তিন. নফস মুতমাইন্নাহ- যা সৎ ও উত্তম কর্মপ্রবণ ও পরিতৃপ্ত আত্মা। (সূরা ৮৯ : আয়াত-২৭)রুহ সম্পর্কে বলা হয়েছে- রুহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার একটি আদেশ। (সূরা ১৭, : আয়াত-৮৫)
৫. সৈয়দ আলী আহসান, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, পৃষ্ঠা ২১৬-২১৭।৬. শিল্পী আমিনুল ইসলামের একক ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৮ ক্যাটালগ, এবং মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮।
৭. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শৈল্পিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ, দৈনিক সংগ্রাম, ঈদ সংখ্যা ২০০৭ (অক্টোবর)।
৮. সৈয়দ আলী আহসান, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, পৃষ্ঠা ২১৬-২১৭।
৯. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ২০০২, পৃ-৬২।
১০. Dr. A. K. M. Yaqub Ali, Select Arabic and Persian Epigraphs, 1988, PP 16-77. ১৬-৭৭. এবং অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, মুসলিম ক্যালিগ্রাফি, ২০০৫, পৃ-৬৬।
১১. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ২০০২, পৃ-৬২-৬৩।
১২ Catalogue of the special Exhibition of Islamic Art in Bangladesh in Dhaka Museum, April 1978, P-21.
১৩. Do. P-18
১৪. মুহাম্মদ নূরুর রহমান, আরবী ক্যালিগ্রাফীর উদ্ভব ও বিকাশ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভ ২০০৫) পৃ- ৬৭-৬৮
১৫. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ২০০২, পৃ- ৭৮-৭৯
১৬. মুহাম্মদ নূরুর রহমান, অভিসন্দর্ভ ২০০৫, পৃ-৬৮
১৭. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, ৭ ফেব্র“য়ারী ২০০৭
১৮. ফাতেমাতুজ জোহরা, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আবদুর রহীমের শিল্পকর্ম, দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ জুলাই ২০০৮ ও মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮
১৯. ক্যালিগ্রাফ আর্ট, প্রথম সংখ্যা, আগস্ট-২০০৩
২০. ক্যালিগ্রাফি, ১ম সংখ্যা, মার্চ-মে ২০০৮, পৃ-৬
২১. ফাতেমাতুজ জোহরা, বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী শিল্পধারা: ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক সংগ্রাম, ১৬ জানুয়ারী ২০০৭ এবং পুরান ঢাকায় তাজমহলের ক্যালিগ্রাফি, ক্যাটালগ, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ২০০৮
২২. মুহাম্মদ নুরুর রহমান, অভিসন্দর্ভ, ২০০৫, পৃষ্ঠা-৮৫
২৩. ক্যালিগ্রাফার আর্ট, প্রথম সংখ্যা, আগস্ট ২০০৩, পৃষ্ঠা-৫
২৪. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮।
২৫. ক্যালিগ্রাফি, মার্চ-মে ২০০৮, পৃ-৮ এবং ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৭, শিল্পকলা একাডেমী গ্যালারী।
২৬. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি : ঐতিহ্য ও শিল্পবোধের পথে যাত্রা, দৈনিক সংগ্রাম, ১৩ মার্চ, ২০০৫।
২৭. আশরাফুল ইসলাম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক ভাবনা, ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি স্মারক (১৯৫২-২০০২), জুলাই ২০০২, পৃ ১২৪-১৩৮্
২৮. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি : সম্ভাব্যতা ও চলমান ধারা, দৈনিক সংগ্রাম, ৯ মে, ১৯৯৭।
২৯. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফি : বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প, দৈনিক বাংলাবাজার, ৩০ জুন, ২০০৬।
৩০. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইন্টারনেটে ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক সংগ্রাম, ২১ মে, ২০০৮।
৩১. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ২৬ মে, ২০০৬ এবং নান্দনিকতার নব আলেখ্য বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ১১ জুন, ২০০৪ এবং বাংলাদেশের ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ৯ জুলাই, ২০০৪।
৩২. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, ৭ ফেব্র“য়ারী, ২০০৭।
৩৩. ২০০৫ সালে সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঢাকার শহীদবাগস্থ বাসভবনে প্রস্ফুটিত ফুলের আকৃতির একটি তুগরা ক্যালিগ্রাফি ফ্রেস্কো করেন শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম। এ ছাড়াও অন্যান্য ক্যালিগ্রাফি শিল্পী বিভিন্ন স্থানে এ মাধ্যমে কাজ করছেন।
৩৪. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফি : বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প, দৈনিক বাংলাবাজার, ৩০ জুন, ২০০৬।
৩৫. ইসলামিক আর্ট অর্গানাইজেশন, ঢাকা তাদের কর্মপরিকল্পনায় এ বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করছেন।
৩৬. ফাতেমাতুজ জোহরা, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আবদুর রহীমের শিল্পকর্ম, দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ জুলাই, ২০০৮।
[-মোহাম্মদ আবদুর রহীম : শিল্পী, গবেষক, গ্রন্থকার ও সেক্রেটারি, ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ, প্রশিক্ষক, ক্যালিগ্রাফির শৈলী বিষয়ক কোর্স।]
ইরানে ক্যালিগ্রাফি শিল্প
১৭তম আন-র্জাতিক কুরআন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য ইরানের রাজধানী তেহরানে গিয়েছিলাম। সেখানে ক্যালিগ্রাফির একটি জমকালো বিভাগ ছিল, যা প্রদর্শনীর মূল আকর্ষণ হিসেবে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। এতে বাংলাদেশ, পাকিস-ান, কাতার, উজবেকিস-ান, আজারবাইজান, রাশিয়া, সুদান, তিউনেসিয়া, তুরস্ক, ইরাক, লেবানন, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে প্রায় ত্রিশ জনের মত ক্যালিগ্রাফি শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। প্রদর্শনী বিকেল চারটা থেকে রাত বারোটা। সকালের দিকে আমাদেরকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স'ান দেখানো হয়। তেহরান আল বুর্জ পর্বতমালার পাদদেশে বিশাল আয়তনের এক শহর, যাকে বলে মেগাসিটি। শহরের নতুন অংশ আধুনিক আর পুরান অংশ অত্যন- ঘনবসতিপূর্ণ। রাস-াগুলো ঝকঝকে, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হয়, রাস-ার পাশে কিছু দূর পর পর সাদকার বাক্স আছে এবং চমৎকার ছোট পাইপাকৃতির ডাস্টবিন আছে যাতে টুকরো কাগজ কিংবা চকলেটের মোড়ক ফেলা যায়, এটা উন্নত দেশের একটা স্বাভাবিক চিত্র।একটু নির্জন ফুটপাথের দেয়াল ঘেষে শস্যদানা ছড়ানো, কোথাও এর সাথে পানির পাত্রও রাখা আছে। বুনো কবুতর, ঘুঘু, চড়াই সেখানে একসাথে নির্ভয়ে খাচ্ছে। আর আছে নানা রকম ফোয়ারা এবং স্বচ্ছ পানির নালা। গরমের সময় প্রায় চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠে। রাস-ার পাশে সারবাধা ঝাউ কিংবা চিনার গাছ। কয়েক জায়গায় দুপাশে রাস-া, মাঝে অনেক লম্বা পার্ক। পার্কের মাঝ বরাবর স্বচ্ছ পানির নালা। গাছের ছায়ায় বেঞ্চ। পানির কলকল শব্দে হৃদয় জুড়িয়ে আসে। তেহরানে গুলিস-ান প্যালেসের অদূরে বুযুর্গ বাজার অর্থাৎ বড় বাজার, এত বড় যে এক প্রান- থেকে অন্য প্রানে- যেতে লোকজন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ছে। প্রায় কিছু দূর পর পর ঐতিহ্যবাহী কারুকাজ খচিত মাজার বা মসজিদ, এমনকি কোন কোন আধুনিক ইমারতগাত্রে চমৎকার ক্যালিগ্রাফি দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে। ফ্লাইওয়ের নিচে ফাঁকা জায়গায় ফারসি অনুবাদসহ ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। আছে দাস-ানে হুনারমান্দে ইরান অর্থাৎ কারুশিল্পের দোকান। ধাতু বা কাঠ দিয়ে অসাধারণ কারুকাজ খচিত জিনিসপত্র সেখানে রয়েছে, আর ইরানী কার্পেট, ওয়ালম্যাট, জায়নামাজ এত সুক্ষ্ম ও নিখুঁত দক্ষতায় বোনা, দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তেহরানেই এত রকমের জাদুঘর, যেন এন্টিক নগরী। হাজার বছরের ঐতিহ্য অত্যন- যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তেহরানের একটা মহল্লা একটা বড় শহরের মত বিশালাকায় আয়তনের। যেমন- জামারান কিংবা নিয়াভারান। জামারানে ইমাম খোমেনীর বাড়ি, অবশ্য সে বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকতেন বলে আমাদেরকে জানানো হয়। হোটেল থেকে বহুদূর নিয়াভারান, সেখানে বিসমিল্লাহ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলাম। এ প্রদর্শনীতে আমার শিল্পকর্ম ছিল, সেখানে আমাকে লোগো সেকশনে অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং জুরি বোর্ডের সদস্য মনোনীত করা হয়। প্রদর্শনীতে বিসমিল্লাহর অসাধারণ আর বিচিত্র বিন্যাসের ক্যালিগ্রাফিসমূহ দর্শকদের মুগ্ধ করে। আমাদেরকে ইফতার করানো হয় ইরানের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে। খোমেনী মুসাল্লা অর্থাৎ খোমেনী মসজিদ কমপ্লেক্সে কুরআন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। কমপ্লেক্সের ভেতর-বাইরে অসাধারণ ক্যালিগ্রাফি আর ফ্লোরাল নকশা দিয়ে সাজানো। আন্ডারগ্রাউন্ড বাজারে ক্যালিগ্রাফি, কুরআন, তসবিহ, জায়নামাজ, হিযাব প্রভৃতির দোকান রয়েছে। প্রদর্শনীস'লে কুরআনের সিডি-ডিভিডি, বিভিন্ন রকমের অনুবাদ-তাফসির দোয়ার কিতাবসহ ধর্মীয় বই-পুস-ক রয়েছে। আলাদাভাবে সরকারি ব্যবস'াপনায় বিভিন্ন ভাষায় তরজমা-তাফসিরে সমৃদ্ধ একটি বিভাগও সেখানে ছিল। শিশুদের জন্য চমৎকার ও আকর্ষনীয় বিভাগ, ইসলামী শিল্পকলার বিভিন্ন বিভাগ যেমন- মুনাব্বাত (লতাপাতা ও এর মটিফ), যুখরুফাত (এরাবিক ডিজাইন), তাযহীব (শিল্পকলায় স্বর্নের প্রয়োগ ও ব্যবহার), নকশা ও ক্যালিগ্রাফির জমকালো শিল্পকর্মসহ সরাসরি এসব বিষয় হাতেকলমে দেখানোর জন্য শিল্পীরা বসে সেগুলো করছিলেন। ক্যালিগ্রাফির দুটো আলাদা বিভাগ ছিল, ইরানী এবং বৈদেশিক সেকশন। ইরানী সেকশনে নাস-ালিক, সিকাসে-, কুফি মাশরেকী, নাসখী ইরানী লিপির প্রাধান্য ছিল। সেখানে কাঠের ওপর ইনলে পদ্ধতিতে ক্যালিগ্রাফি ও নকশা দেখানো হয়। ধাতু পেটাই, খোদাই ও কাটাই পদ্ধতিতেও চমৎকার কারুকাজ ও ক্যালিগ্রাফি দেখানো হয়। মূলত দক্ষতা ও নিপুন হাতের ওস-াদি কত উচু স-রের হতে পারে তা এ প্রদর্শনীতে না গেলে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। ক্যালিগ্রাফি শিল্পীগণ খাগের কলম দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে শিল্পকর্ম করছেন, দর্শক মুগ্ধ হয়ে দেখছে, কেউ সেটা বেশ উচ্চমূল্যে সংগ্রহ করছে। প্রদর্শনীতে আগত দর্শকদের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল মহিলা ও শিশু। ইরানে হিযাব ছাড়া কোন মহিলা বাইরে চলাচল করে না। রাস-া, বাজার, অফিস, প্রদর্শনী সবখানেই হিযাব পরিহিত মহিলাদের অবাধ-অনায়াস উপসি'তি, বলা বাহুল্য, ১৫ দিনের সফরে হিযাব ছাড়া কোন মহিলা নজরে পড়েনি। প্রদর্শনীতে সংবাদ মাধ্যমের অধিকাংশ রিপোর্টার, ফটো সাংবাদিক ছিল মহিলা। ক্যালিগ্রাফি, নকশা ও শিল্পকলার সব বিভাগে মহিলাদের সরব অংশগ্রহণ ও দক্ষতা নজরে পড়েছে। ইরানী জাতি বিনির্মানে এই স্মার্ট, পরিশ্রমী, আন-রিক ও দক্ষ মহিলাদের অবদান অনুভব করা যায়। ক্যালিগ্রাফির প্রতি ইরানী শিশুদের আগ্রহ অনেক বেশী। প্রদর্শনীতে আগত শিশুরা খুব মনোযোগ দিয়ে ক্যালিগ্রাফি অঙ্কন প্রত্যক্ষ করে। শিল্পীরা তাদেরকে ছোট ছোট কাগজে ক্যালিগ্রাফি করে উপহার দেয়। অনেক শিশু চমৎকার ক্যালিগ্রাফি এঁকে শিল্পীদের হতবাক করে দেয়। এবার রমযান মাস উপলক্ষে ইরানে বহু প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল। আন-র্জাতিক পর্যায়ে এ রকম তিনটি প্রদর্শনীতে সেখানে আমার শিল্পকর্ম মনোনীত হয়। কুরআন প্রদর্শনীতে উপস'াপিত ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মের মধ্য থেকে দু’টিকে তেহরান কুরআন জাদুঘরের জন্য কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করে। এছাড়া আল আসমাউল হুসনা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আমার শিল্পকর্ম স'ান পায়। ইরান ছেড়ে আসার একদিন আগে তেহরান আর্ট ব্যুরোতে গিয়েছিলাম আন-র্জাতিক ভিজ্যুয়াল আর্ট প্রদর্শনী দেখতে। বিদেশ শাখার পরিচালক আগ্রহের সাথে আমার ওয়েবসাইট দেখলেন এবং বললেন, তাদের এ প্রদর্শনীতে আমার শিল্পকর্ম নিতে খুবই আগ্রহী। হোটেল থেকে কয়েক মিনিটের পথ, আমি দুটি ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম দিলাম এবং এন্ট্রিফর্ম পূরণ করে দেয়ার পর তিনি অন্যান্য কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, আর ফেরার সময় প্রায় দু’শ ডলার সমমূল্যের ক্যাটালগ ও আর্টের বই উপহার দিলেন। ইরান সফরে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির ব্যাপকতা, গুরুত্ব, ব্যবহারিক ক্ষেত্র, প্রয়োগ ও ভাবমর্যাদা বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে জানার সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে ক্যালিগ্রাফির প্রতি ইরানী শিশুদের আগ্রহ ও স্বতষ্ফুর্ত অংশগ্রহণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির বিশাল সম্ভাবনার বিষয়টিও এ সফরে সুষ্পষ্ট অনুধাবন করেছি। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির প্রসার, প্রচার ও উন্নয়নে ইরান সফর পাথেয় হয়ে থাকবে। -মোহাম্মদ আবদুর রহীম
Subscribe to:
Posts (Atom)