Saturday, November 18, 2017

জুমাবারের ক্যালিগ্রাফি ক্লাসের উন্মুক্ত আলোচনা : প্রথম পর্ব




প্রায় প্রতি সপ্তায় ক্লাস শেষে ইরাদা হয়, আলোচনাটা লিখে ফেলি, তাতে ক্যালিগ্রাফি সংশ্লিষ্টদের কিছু ফায়দা হতে পারে। আজ তাই আলোচনার সদর মোকামগুলো তুলে ধরার কোশেশ করব, ইনশা আল্লাহ।
ক্যালিগ্রাফি যেকোন ভাষার হরফে হতে পারে। আমরা বাংলাভাষী, বাংলাভাষার নিজস্ব হরফ আছে, বাংলা লিপি এর নাম। আঞ্চলিক অনেক ভাষা এলিপিতে লেখা হয়। এসব ভাষার মধ্যে কিছু জীবন্ত আর আছে মৃত ভাষা। মৃত এমন একটি ভাষার নাম হচ্ছে সংস্কৃত। এভাষায় পৃথিবীর কেউ এখন কথা বলে না। কিন্তু বাংলালিপিতে এভাষায় প্রচুর সংখ্যক কিতাব বই লেখা হয়েছে। বাংলালিপির জন্ম যেখানেই হোক না কেন, এর উৎকর্ষ, দলাই-মালাই, লালন-পালন, আদর-কদর হয়েছে মুসলমানদের হাতে। এজন্য একটা সময় পর্যন্ত এটা ব্রাহ্মন্যবাদিদের কাছে ঘৃনার ও অচ্ছ্যুত অপবিত্র বলে গন্য হত। এর প্রকাশ তারা করেছিল, ক-অক্ষর গোমাংশ বলে। গোমাংশ স্পর্শ যেমন তাদের কাছে জাত চলে যাবার মত বিষয়, গোহত্যা যেমন মহাপাপ, ক অক্ষর অর্থাত বাংলালিপিও তেমনি মুসলমান স্পর্শে জাত হারিয়ে অপবিত্র অচ্ছ্যুত হয়ে গেছে। তাই প্রাচীন সংস্কৃত ভাষার কেতাবাদি বাংলা হরফে লেখা হলেও তা একসময় নাগরি লিপিতে লেখা হতে থাকে। যদিও নাগরি লিপিও সংস্কৃত ভাষার নিজস্ব লিপি নয়, বরং ধারকরা লিপি। এই লিপিকে গুরুত্ব ও পবিত্র বুঝাতে একে তারা দেবনাগরি লিপি বলে প্রচার করে। আর বাংলালিপিকে অচ্ছ্যুত বলে, বাংলাভাষাকে ম্লেচ্ছভাষা বলে হেয়জ্ঞান করে। তারপর এভাষার দখল নিতে একসময় একে সংস্কৃতের দুহিতা আখ্যা দিয়ে, ভাষার মধ্যে সংস্কৃত শব্দের বাহুল্য ব্যবহার শুরু করে। বিদ্যালয়ে এবিষয়ের শিক্ষকগণকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন একটি বিদেশি দখলদার শব্দকে তৎসম তদ্ভব বলে মেষচামড়ায় আবৃত নেকড়েকে মেষপাল সাবাড় করার মওকা দেয়া। তাই আমাদেরকে বাংলালিপি ও ভাষার ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে।
ক্যালিগ্রাফির ভেতরকার আলোচনা পরের লেখাগুলোতে আসবে ইনশা আল্লাহ।

Friday, October 20, 2017

ক্যালিগ্রাফি বনাম ক্যালিওগ্রাফী নিয়ে কথা




সকালে ওয়ার্ড কমিশনারের সচিব মহোদয় ফোন দিয়ে জানতে চাইলেন গতকালের পুরন করা ফরমে শব্দটা কি ক্যালিগ্রাফি নাকি ক্যালিওগ্রাফী হবে? বললাম, কি বানান ওখানে দেয়া আছে, তিনি বললেন, ক্যালিগ্রাফি। বললাম, জ্বি, বানান ওটাই হবে। তিনি সন্দেহের সুরে জানালেন, এতদিনতো এটা ক্যালিওগ্রাফী বলে জানতাম! আমি হেসে বললাম, আমরা কত কিছু যেভাবে ধারণা করি, আসলে তা সেরকম নয়। 
সেই নব্বই দশকের কথা, বাংলা সাহিত্য পরিষদে এক মাসিক সাহিত্য সভায় ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে লেখা পাঠ করে বিপদে পড়ে যাই। পাঁচজন আলোচক আমাকে আচ্ছা করে ধুইয়ে দিলেন, এত অল্প জেনে কেন এমন একটি কঠিন বিষয়ে লিখতে গেলাম, কারন বিষয়টির বানানই আমি ভুল করেছি, তারা বললেন, শুদ্ধ বানান হবে 'ক্যালিওগ্রাফী'। আমি তখন একেবারে আনকোরা লেখক। এত সমালোচনা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, দাড়িয়ে বললাম, আমার লেখার সমালোচনার জবাব দিতে চাই। অনুষ্ঠানের সভাপতি তখন বোধহয় আবদুল মান্নান তালিব ছিলেন, তিনি অনুমতি দিলেন। সেই জবাবি ভাষা একটু রসকষহীন হয়েছিল, এমন কি জবাব দেয়ার মধ্যেই একজন অভিধান নিয়ে এলেন পাশের লাইব্রেরি কক্ষ থেকে, অবশেষে হলভর্তি লেখক শ্রোতা মানতে বাধ্য হলেন, শব্দটি আসলে 'ক্যালিগ্রাফি'। তবে এই গলত মশহুর বানানটি চালু করার কিছুটা অবদান আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ শহীদুল্লাহ এফ. বারী রহ. এরও ছিল, নব্বই দশকে পত্রিকা প্রকাশিত তাঁর ক্যালিগ্রাফি নিয়ে লেখায় বানান ছিল, ক্যালিওগ্রাফি। আর জনসাধারণ এখনও ক্যালিওগ্রাফি বলতে পছন্দ করে। আমার ঘনিষ্ঠ প্রবীণ এক ক্যালিগ্রাফি শিল্পির স্ত্রীকে কিছুদিন আগে ক্যালিওগ্রাফী বলতে শুনলাম। ফেবুতে ক্যালিগ্রাফির ছবি দিয়ে অনেককে ক্যালিওগ্রাফী লিখতে দেখা যায়।
আসলে ইংরেজি ক্যালিগ্রাফি শব্দটি গ্রিক শব্দ ক্যালিগ্রাফিয়া থেকে এসেছে। ক্যালোস=সুন্দর ও গ্রাফেইন=হাতের লেখা, শব্দদ্বয়ের সমষ্টি হচ্ছে ক্যালিগ্রাফিয়া এবং পরে ইংরেজিতে ক্যালিগ্রাফি হয়। আরবিতে একে 'আল-খত আল-আরাবি' বলে। শিল্পকলায় একে বলে 'ফান্ন আল-খত আল-আরাবি'।